নারীদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ

Woman

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর পরিচালিত প্রশিক্ষণ একাডেমীতে নারীদের জন্য ৪টি ট্রেডে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ শুরু হতে যাচ্ছে। আগ্রহীরা  আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন।

প্রতিষ্ঠানের নাম: শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমী

কোর্সের নাম: কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুইং মেশিন অপারেটর, বিউটিফিকেশন, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং ও ইন্টারনেট।

কোর্সের মেয়াদ: ৩ মাস
আসন সংখ্যা: ১০০ জন, আবাসিক
শিক্ষাগত যোগ্যতা: কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশনে এইচএসসি। অন্যান্য ট্রেডে এসএসসি।
বয়স: ১৮-৩৫ বছর।

ভর্তি পরীক্ষা: ০৬ অক্টোবর ২০১৫, সকাল ১০টা।

যোগাযোগ:
আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা, শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমী, জিরানী, বিকেএসপি, গাজীপুর।

আবেদনের শেষ সময়: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জনবল নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর

board-dhaka

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইএসআইপি) এর আওতায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জনবল নিয়োগ করা হবে। আগ্রহীরা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।

প্রতিষ্ঠানের নাম: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর

পদের নাম: ডাটা এন্ট্রি অপারেটর
পদ সংখ্যা: ০৩ জন
শিক্ষাগত যোগ্যতা: এইচএসসি/সমমান
অভিজ্ঞতা: ২ বছর
বয়স: ৩০ বছর
বেতন: ১১,০৯০ টাকা।

পদের নাম: হিসাবরক্ষক
পদ সংখ্যা: ০১ জন
শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্নাতক (বাণিজ্য)
বয়স: ৩০ বছর
বেতন: ১১,০৯০ টাকা।

পদের নাম: হিসাবরক্ষক, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস
পদ সংখ্যা: ০৩ জন
শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্নাতক (বাণিজ্য)
বয়স: ৩০ বছর
বেতন: ৯,৬৫০ টাকা।

পদের নাম: কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস অ্যাসিসটেন্ট
পদ সংখ্যা: ০৬ জন
শিক্ষাগত যোগ্যতা: এইচএসসি/সমমান
অভিজ্ঞতা: ২ বছর
বয়স: ৩০ বছর
বেতন: ৯,৬৫০ টাকা।

আবেদনের নিয়ম: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইট www.dshe.gov.bd তে আবেদনপত্র পূরণের বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া আছে।

আবেদনের শুরু ও শেষ সময়: ০৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে অনলাইনে আবেদনপত্র ও ফি জমা দেওয়া শুরু হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ৫টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

সহজ ৭ টি কাজ কাটাবে অফিসে একটানা কাজের বিরক্তি

Office -

একটানা কাজ করলে কাজের প্রতি বিরক্তি চলে আসতে পারে। আবার কিছু কিছু কাজ আছে যার জন্য আপনাকে ঘন্টার পর ঘণ্টা ডেস্কে বসে থাকতে হয়। আর এই কাজ করতে করতে এক সময় বিরক্তি চলে আসে। তখন কি করবেন? আসুন জেনে নিই এমন কিছু বিষয় যা কাজ করার মাঝে আপনি করতে পারেন আপনার এই বিরক্তি কাটানোর জন্য।

১। বই পড়ুন

কাজ করতে করতে বিরক্ত চলে আসলে কিছুক্ষণ বই পড়ুন। অফিসে সাথে করে নিয়ে আসতে পারেন পছন্দের কোন বই অথবা অনলাইন থেকে পড়ে নিতে পারেন প্রিয় কোন বইয়ের কিছু অংশ। এটি আপনার কাজের বিরক্তটা কাটাবে সাথে নতুন করে কাজে মনযোগী করে তুলবে।

২। অন্য বিভাগ থেকে ঘুরে আসুন

আপনার অফিসে অনেকগুলো বিভাগ কাজ করে। নিজের কাজের বিভাগ থেকে বের হয়ে, ঘুরে আসুন অফিসের অন্য কোন বিভাগ থেকে। চাইলে অন্য বিভাগে থাকা আপনার বন্ধুটিকেও কাজে সাহায্য করতে পারেন।

৩। গান শুনুন

কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণ গান শুনুন। গান আপনার মনকে সতেজ করে তুলবে যা আপনাকে কাজের প্রতি নতুন করে মনযোগী হয়ে উঠতে সহায়তা করবে।

৪। কিছুক্ষণ হাসুন

গান শুনে বা বই পড়ে কাজের প্রতি মনযোগী হতে না পারলে কোন মজার ভিডিও দেখুন যা আপনাকে কিছুক্ষণ হাসাবে। আর এই হাসি আপনার কাজের ক্লান্তি দূর করে দেবে।

৫। নিজেকে গোছান

কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেছেন? কিছুক্ষণ নিজের ডেস্কটি গোছান। এবার একটি লিস্ট করে ফেলুন যা যা আপনি করতে চান। নিজের লক্ষ্যটাকে আরেকবার মনে করে নিন। জীবনে কি করতে চেয়েছিলেন, কি করবেন তার একটি কর্ম পরিকল্পনা করে ফেলুন। এটি আপনাকে আপনার কাজের প্রতি আরও যত্নশীল করে তুলবে।

৬। নতুন বন্ধু তৈরি করুন

আপনার কাজের জায়গায় আপনার কিছু বন্ধু আছে। তাদের বাইরে নতুন কিছু বন্ধু তৈরি করুন। যাদের সাথে কথা খুব কম বলা হয় তাদের সাথে কথা বলুন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিন দেখবেন কাজের একঘেয়েমিতা অনেকটা কমে গেছে।

৭। গেম খেলুন

কাজের একঘেয়ামিতা কাটাতে গেমের তুলনা হয় না। ইন্টারনেটে অনেক রকম গেম পাবেন। কাজের ফাঁকে খেলে ফেলুন কিছু গেম। কেটে যাবে একঘেয়েমি অনায়াসেই।

যে ৬টি অদ্ভুত কারণে হুট করে বেড়ে যাচ্ছে আপনার ওজন

Weight-Loss

ওজন বাড়ার সমস্যায় ইদানিং অনেকেই ভুগছেন। অনেক মাথা ঘামানোর পরেও ঠিক কী কারণে ওজনটা বাড়ছে সেটা বুঝতে পারেন না অনেকেই। মাঝে মাঝে কিছু অদ্ভুত কারণে বেড়ে যেতে পারে আপনার ওজন। খাওয়া দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার পরেও এই অদ্ভুত কারণগুলোতে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না আপনি। জেনে নিন অদ্ভুত সেই কারণগুলো সম্পর্কে যেগুলো আপনার ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী।

মানসিক চাপ

অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে ওজনটা বেড়ে যেতে পারে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য অনেকেই অ্যান্টি ডিপ্রেশন পিল খেয়ে থাকেন। এই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে মানসিক চাপে থাকলে অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ফলে ওজনটা বেড়ে যায় অনেকখানি।

ভুল ওষুধ সেবন

আপনি যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য পিল খান কিংবা হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার ওষুধ, স্টেরয়েড, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, হার্টের ওষুধ, ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া ওজনের কারণটা হতে পারে ডাক্তারের ভুল প্রেসক্রিপশন। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে হঠাৎ করেই আপনার ওজনটা বেড়ে যেতে পারে অনেক। এক্ষেত্রে আপনার সমস্যাগুলো ডাক্তারের সাথে আলাপ করে সমাধান করে নেয়া উচিত।

হজমের জটিলতা

আপনার যদি নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমে সমস্যা হয় তাহলে আপনার ওজন কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। সেই সঙ্গে উচ্চমাত্রার আঁশযুক্ত খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে হজমের জটিলতা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন।

বিশেষ কিছু পুষ্টি উপাদানের অভাব

আপনার শরীরে বিশেষ কিছু পুষ্টি উপাদানের অভাবের কারণেও আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব হলে আপনার ক্লান্তি বেড়ে যাবে। ফলে মেটাবলিজম কমে যাবে এবং পরিশ্রম করার ইচ্ছা কমে যাবে। ফলে আপনার ক্যালরি কম পুড়বে এবং ওজন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। এনার্জি বাড়ানোর জন্য আপনি বিভিন্ন এনার্জি ড্রিঙ্ক, কোমল পানীয়, কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এবং মিষ্টি খাওয়া শুরু করবেন। ফলে আপনার শরীরের মেদ বাড়তে থাকবে।

বয়স বাড়ছে

যে বিষয়টি আমরা কখনই এড়িয়ে যেতে পারবো না তা হলো বয়স বাড়া। আমাদের বয়সকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে। বয়স বাড়তে থাকলে মেটাবলিজম কমতে থাকে। ফলে এই সময়ে কম খাওয়া এবং প্রচুর ব্যায়াম করা প্রয়োজন। নাহলে মেদটা বাড়তেই থাকবে।

ব্যথা

অনেকেরই কিছুক্ষণ হাঁটলে পা ব্যথা করে কিংবা হাঁটু ব্যথা করে। কারো কারো বাতের সমস্যা থেকে এধরনের ব্যথা হতে পারে। আবার কারো কারো মাসল পেইনও হয়। ফলে ব্যায়ামের অভাবে শরীরে মেদ জমে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বিকল্প ব্যায়াম নির্বাচন করা উচিত।

সূত্রঃ হাফিংটন পোস্ট

ইসলামের ‘সত্যিকার বাণী’ প্রচারে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ১০০ বিলবোর্ড

Bill-Board

ইসলাম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর ‘সত্যিকার বাণী’ প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডজন ডজন বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে।  এই বিলবোর্ডের বাণীগুলোর মূলকথা হলো- চরমপন্থা কিংবা সহিংস জিহাদ নয়, ইসলামের সত্যিকার বার্তা হচ্ছে শান্তি ও ন্যায়বিচার।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা (আইসিএনএ) যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে এই গ্রীষ্মে ১০০ বিলবোর্ড লাগিয়েছে।
বস্টন, নিউইয়র্ক, ফিনিক্স, সান দিয়েগো, এল পাসো অ্যান্ড অস্টিন, টেক্সাস, মেম্ফিস, টেনেসি, ক্লিভল্যান্ড, লাস ভেগাস, নিস জার্সি, নর্থ বার্জেন, পোর্টল্যান্ড, অরেগন, পেনসিলভানিয়া, ডেনভার, ক্যালগারি, ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রভৃতি শহরে এসব বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে।
এসব বিলবোর্ডে যেসব বাণী স্থান পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: ‘মুহাম্মদ (সা.) শান্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার, নারীর অধিকারে বিশ্বাস করতেন’। ‘মুহাম্মদ সা. সবসময় ভালোবাসা শিক্ষা দিয়েছেন, ঘৃণা নয়; সহিসংতা নয়, শান্তি’।  বিলবোর্ডে ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য বিশেষজ্ঞদের ফোন নাম্বার এবং ওয়েবসাইটের ঠিকানাও দেয়া হয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি নাঈম বেগ বলেন, জানুয়ারিতে প্যারিসের শার্লি এবদোতে ইসলামি জঙ্গিদের হামলাসহ কয়েকটি হামলায় ২০ জন নিহত হওয়ার পর এই আইডিয়াটি মাথায় এসেছে।
তিনি বলেন, দৃষ্কৃতিকারীরা মহানবীর শিক্ষাকে ভুলভাবে বুঝেছে এবং আমেরিকান মুসলিম সম্প্রদায় ইসলামের শিক্ষার পুনর্জাগরণ চায়। ‘যখন কোনো লোক মহানবীর শিক্ষার অপব্যবহার করে এবং আমার ধর্মবিশ্বাসকে অপব্যবহার করে তখন একজন মুসলিম হিসেবে আমি আহত হই,’ বলছিলেন  নাঈম বেগ।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী বস্টন নিবাসী কলেজ ছাত্র বিলাল সিদ্দিকী বলেন, প্রথমে ফোন করে অনেক লোক ঘৃণা ছড়ালেও অভিজ্ঞ লোকদের সাথে কথা বলার পর তাদের সুর নরম হয়েছে এবং তারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে আরো বেশি আগ্রহী হয়েছেন।
বস্টনে লাগানো একটি বিলবোর্ডের পাশেই একটি অটো পার্টসের দোকানে কাজ করা অমুসলিম শ্রমিক উইলহার্ম এডওয়ার্ড বলছিলেন, এই প্রচারণার আইডিয়াটি একটি মহৎ কাজ। তিনি বলেন, আমার কাছে মুসলিমসহ সবাই আসে। ‘আমি দেখেছি তারা সবাই ভালো মানুষ,’ বলছিলেন উইলহার্ম। এপি।

টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন : একটি পর্যালোচনা

TV

-এ কে এম হানিফ

সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন

বিটিভিসহ বাংলাদেশের ৩০টিরও বেশি চ্যানেল এবং পত্রপত্রিকায় কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখলে মনে হয় না যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, এর রয়েছে আলাদা ভূখণ্ড এবং গর্ব করার মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কর্মকাণ্ড।
দর্শক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ইউনিলিভার- জাতীয় বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপনচিত্রের দিকে। স্টেশন লোগো বাদ দিলে প্রতিবেশী দেশ পশ্চিম বাংলার টিভি চ্যানেল এবং বাংলাদেশের চ্যানেলের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। কেউ, বিশেষ করে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ব্যক্তিরা কখনো কি এসব বিজ্ঞাপনচিত্রের দিকে নজর দেন না। ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে তৈরী এসব বিজ্ঞাপন শুধু বাংলায় ডাবিং করে চালানো হচ্ছে বিটিভিসহ বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোতে এবং প্রকাশ করা হচ্ছে পত্রপত্রিকায়। অথচ বাংলাদেশে শত শত শিল্পী কলাকুশলী রয়েছেন, যাদের নিয়ে এবং যারা বিজ্ঞাপন তৈরি করছেন। গুণ ও মানের দিক থেকে কোনো অংশেই ভারতের তৈরী বিজ্ঞাপন থেকে এসব বিজ্ঞাপনের মান কম নয়।
তবুও ভারতীয় শিল্পী ও মডেলদের নিয়ে তৈরী বিজ্ঞাপন চালানো হচ্ছে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে। ফলে বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতার কাছে বাংলাদেশের শিল্পী ও মডেলের চেয়ে ভারতীয় শিল্পী ও মডেলই বেশি পরিচিতি পাচ্ছে। এসব বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কি বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বা করদ রাজ্য মনে করে? যদি তা না হবে তাহলে ভারতীয় বাংলা চ্যানেলের জন্য বাংলা ডাব করা বিজ্ঞাপন কী করে তারা বাংলাদেশে প্রচারের কথা ভাবেন? এতে এক দিকে যেমন বাংলাদেশের শিল্পী ও মডেলরা বঞ্চিত হচ্ছেন, অপর দিকে বিজ্ঞাপন নির্মাণকারী কলাকুশলীরাও আর্থিক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন।
ম্যাগনেটিক ফেস ওয়াসের একটি বিজ্ঞাপনে ক্রিকেটার তামীম ইকবালকে দেখা যেত এখন সেখানে দেখা যায় ভারতীয় নায়ক সাইফ আলী খানকে। এ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের যে ক’জন অভিনেতা ও মডেল ইউনিলিভারের বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছেন ধীরে ধীরে তারা সবাই বাদ পড়বেন। সেখানে স্থান করে নেবে ভারতীয় নায়ক নায়িকা ও মডেলরা।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন নীতিমালা ছিল কোনো বিদেশী মডেল দিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করা হলে তা বিটিভিতে প্রচার করতে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। বিটিভিতে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন বিজ্ঞাপন দেয় না, সেখানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আদৌ দেবে কি না সন্দেহ হয়। দিলেও বিটিভি এখন ৬০ শতাংশ সারচার্জ আদায় করে কি না, আমার জানা নেই। প্রাইভেট চ্যানেলগুলো তো বিজ্ঞাপন পেলেই কৃতার্থ, সেখানে সারচার্জের প্রশ্ন তোলার চিন্তাই করা যায় না। সেদিন কোনো একটি প্রাইভেট চ্যানেলে ‘আল্লাহ করিম’ লকেটের বিজ্ঞাপন দেখলাম। এবার শুধু ভারতীয় শিল্পী নয়, একেবারেই হিন্দি ভাষায় লেখাসহ বিজ্ঞাপন। এমনিতেই ভারতীয় চ্যানেলের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে বাংলাদেশের পারিবারিক জীবন বিধ্বস্ত, শিশুরা পর্যন্ত হিন্দি বোঝে এবং বলতে পারে। বাংলাদেশের নায়ক-নায়িকাদের চেয়ে ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের বেশি চেনে তারা। তার ওপর হিন্দি শব্দ সংবলিত বিজ্ঞাপন আমাদের জাতিসত্তার ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
আমাদের সদাশয় ভারতবান্ধব সরকারের কারণে ইতোমধ্যেই সিনেমা হলে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন শুরু হয়েছে। অহরহ ভারতীয় শিল্পীরা বাংলাদেশে এসে অনুষ্ঠান করে বৈদেশিক মুদ্রা লোপাট করছেন। তার ওপর ভারতীয় শিল্পী ও মডেলদের দিয়ে তৈরি করা বিজ্ঞাপনের বিস্তার দেখলে মনে হয় না আমরা বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশের লোকদের মালিকানাধীন বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল দেখছি।
জানি, আমার এ প্রশ্ন শুনে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলবেন আবার কেউবা আরেকটু এগিয়ে বিশ্বায়নের কথা বলবেন। কিন্তু বিশ্বায়ন মানে কি ভারতায়ন, তা না হলে কেবল ভারতীয় শিল্পী মডেলদের নিয়ে তৈরী বিজ্ঞাপন বাংলাদেশে দেখানো হবে কেন? বাংলাদেশের শিল্পী ও মডেলদের দিয়ে তৈরী বিজ্ঞাপনও তো হিন্দিতে ডাব করে ভারতের চ্যানেলে দেখানো যেত। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কি অত্যন্ত চতুরতার সাথে বাংলাদেশে ভারতীয় মানসিকতার কাজ করছে না?
এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করে। ষোলো কোটি মানুষ অধ্যুষিত এ দেশে তাদের পণ্য কী পরিমাণ বিক্রি হয় তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে এত বিশাল একটি বাজার ধরে রাখার জন্য বাজারের মানুষগুলোর প্রতি, তাদের ভাষা সংস্কৃতি সর্বোপরি তাদের মধ্য থেকে বেড়ে ওঠা শিল্পী ও মডেলদের প্রতি কি তাদের কোনো দায়বোধ নেই। সরকার এ ব্যাপারে কিছু বলবে বা করবে বলে আশা করা যায় না। কিন্তু স্বাধীনচেতা শিল্পী ও মডেলদের এবং বাংলাদেশের জাতিসত্তায় বিশ্বাসী সব মানুষের প্রতি আবেদন জানাব এর প্রতিবাদ করার। আমাদের নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতি ও শিল্পীদের অস্তিত্বের জন্য এর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ হওয়া দরকার।
ভারতে আমাদের দেশের কোনো টিভি চ্যানেল দেখানো হয় না। অনেক কারণের মধ্যে আমাদের দেশে তৈরী পণ্যের প্রচার ও প্রসার ঠেকাতে আমাদের ‘অতীব বন্ধু’ দেশের সরকার বাংলাদেশের চ্যানেল সম্প্রচারে বাধা দিয়ে আসছে নানা অজুহাতে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আমরা তাদের চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করতে পারি না নতজানু নীতি এবং ভারতপ্রেমী ব্যবসায়ীদের জন্য। ভারতীয় দু-তিনটি চ্যানেল বাংলাদেশে প্রচার বন্ধ করতে হাইকোর্ট আদেশ দেয়া সত্ত্বেও সেগুলো বন্ধ করা যায়নি। সব চ্যানেল বন্ধ করা তো সরকারের পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে ভারতীয় মডেল ও শিল্পীদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানিয়ে বাংলায় ডাব করে বাংলাদেশের চ্যানেলে প্রচার বন্ধ করা সম্ভব। অন্তত বিটিভির বিজ্ঞাপন নীতিমালার (তা বর্তমানে কার্যকর আছে কি না আমার জানা নেই) আলোকে বিদেশী শিল্পী দিয়ে তৈরী বিজ্ঞাপনে সারচার্জ আরোপ করা যেতে পারে। এতে চ্যানেলগুলো যেমন আর্থিক দিক থেকে লাভবান হবে, তেমনি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরিতে বাংলাদেশের শিল্পীদের ব্যবহার করতে উৎসাহিত হবে। এ ব্যাপারে টেলিভিশন মালিকদের প্রতিষ্ঠান অ্যাটকো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।

এনার্জি বাড়ানোর চটজলদি উপায়

Energy

আপনার কি সব সময় ক্লান্ত লাগে? যাই করুন না কেন সব সময় ঘুম পায়? মাঝে মাঝে শরীরে এনার্জির ঘাটতির ফলে ক্লান্ত লাগে। কিছু এনার্জি বুস্টিং টিপ্স দেয়া হলো যা ফলো করলে দেখবেন সমস্যা অনেকটা কমে গেছে। সকালের নাস্তা বাদ দেবেন না : ব্রেকফাস্ট দিনের প্রথম খাবার। তাই এটা আপনার সারা দিন শরীরের এনার্জি লেভেল নির্ধারণ করে। তাই প্রাতঃরাশ না করলে শরীর নতুন করে শক্তি সঞ্চয় হয় না। ফলে যত সময় যায় ধীরে ধীরে আপনার শরীরের এনার্জি কমতে থাকে। সকালে তাই এমন খাবার দিয়ে ব্রেকফাস্ট করুন যাতে প্রচুর কার্বোহাইড্রেড আর প্রোটিন আছে। ব্যালেনসড ডায়েট : ভালো করে ব্রেকফাস্ট করেছেন বলে লাঞ্চ বা দিনের অন্য কোনো খাবার মিস করবেন না। প্রোটিন আর কার্বোহাইড্রেড সমৃদ্ধ খাবার ছাড়াও রোজ প্রচুর ফল খান। এছাড়াও এনার্জি বুস্টিং খাবার যেমন ডিম, ওটস বা বাদাম ডায়েটে রাখুন। ব্যায়াম : যতই সঠিক খাবার খান ঠিক মতো ব্যায়াম না করলে কোনো লাভ হবে না। সকালে জগিং হোক বা সন্ধ্যাবেলায় ইভনিং ওয়াক, যেকোনো ব্যায়াম শরীরের জন্য খুব দরকারি। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন : মাঝে মাঝে কম পানি খেলে ড্রেনড আউট আর ডিজি লাগে। দিনে কম করে ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। স্ট্রেস আউট হবেন না একদম : স্ট্রেসড থাকলে খুব তাড়াতাড়ি এনার্জি লেভেলে ঘাটতি হয়। এই সময় ডিপ ব্রিদিং, ভালো মিউজিক শুনুন বা ভালো কোনো সিনেমা দেখুন বা মেডিটেশন সাহায্যে স্ট্রেস কমান। বদভ্যাস পাল্টান : মদ বা সিগারেট সেবনের পর কিছুক্ষণের জন্য এনার্জি লেভেল বেড়ে গেলেও লং রানে কিন্তু তা ক্ষতি করে। কাজেই এ দুটি এড়িয়ে চলুন। হাসি খুশি মানুষের সান্নিধ্যে থাকুন : দেখা গেছে নেগেটিভ ইমোশনস যেমন রাগ, ঈর্ষা, ফ্রাসট্রেশন এইসবের মধ্যে থাকলে স্ট্রেস বেড়ে যায় ফলে এনার্জি কমে যায়। তাই যতটা পারবেন হাসি খুশি মানুষের মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন।

চীন ভারতকে ছিদ্র করে ফেলছে

china-india

-এবনে গোলাম সামাদ

ব্রিটিশ শাসনামলে কবি দার্শনিক ইকবাল তাঁর সাহিত্যজীবনের প্রথম পর্বে লিখেছিলেন : “সারে জাহাছে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা,/ হাম বুলবুলিঁ হ্যায় ইসকা, ইয়ে গুলিস্তাঁ হামারা।/ পার্বত হো সাবছে উঁচা হামসায়ে আসমান কা,/ হো সানত্রি হামারা, হো পাসবান হামারা।”   টানা বাংলা করলে দাঁড়াবে, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেশ হলো আমাদের দেশ, হিন্দুস্তান। আমরা হলাম এর বুলবুলি। আর এ হলো আমাদের ফুলবাগান। সবচেয়ে উঁচু আকাশছোঁয়া পাহাড় হলো আমাদের। যা হর আমাদের সান্ত্রি ও প্রতিরক্ষক।
ইকবাল যখন এসব কথা লিখেছিলেন, তখন নেপালকে মনে করা হতো ভারতের অংশ। তাই সবচেয়ে উঁচু পাহাড় মাউন্ট এভারেস্টকে নিয়ে ইকবাল করেছিলেন গৌরব; কিন্তু এখন আর এই গৌরব করা চলে না। কেননা, মাউন্ট এভারেস্ট ভারতে অবস্থিত নয়। তা অবস্থিত হলো তিব্বত ও নেপাল সীমান্তে। তিব্বতি ভাষায় মাউন্ট এভারেস্টকে বলা হয়, ‘কোমোলাংমো’। এই পর্বতশৃঙ্গ পড়ে মোটামুটি তিব্বতের মধ্যে। এবং সামান্য কিছুটা পড়ে নেপাল সীমান্তের মধ্যে। চীন এখন চাচ্ছে কোমোলাংমোর মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ কেটে রেলপথ স্থাপন করতে, যা থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুর দূরত্ব হবে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার। নেপাল এই ১৬০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করবে। এর ফলে কাঠমুন্ডু থেকে ট্রেনে করে যাওয়া সম্ভব হবে তিব্বতের রাজধানী লাসা হয়ে বেইজিং। এই রেলপথের মাধ্যমে বিপুলভাবে বেড়ে যাবে নেপাল-চীন বাণিজ্য। ভারত যার সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে না। বিষয়টি আমাদের জন্য মনে হয় হতে যাচ্ছে ভালো। কেননা, ভারত যদি আমাদের নেপালে যাওয়ার জন্য ট্রানজিট দেয়, তবে নেপালের মাধ্যমে বাড়ার সম্ভাবনা থাকছে বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য।

নেপালের ইতিহাস অনুশীলন করলে আমরা দেখি যে, একসময় নেপালে ছিল অনেক রাজার রাজ্য- যা ভারতের রাজপুতনা অঞ্চল থেকে নেপালিরা যেয়ে জয় করেন ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দে। নেপালিদের ভাষা ছিল নেপালি। নেপালিরা এই ভাষা চালু করে নেপালে সরকারি ভাষা হিসেবে। নেপালদের নাম অনুসারেই দেশটার নাম হয় নেপাল। নেপালিরা ছিল হিন্দু। তারা সেখানে হিন্দু ধর্মকে সরকারি ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করে। বলে, নেপাল হলো একটি হিন্দু রাষ্ট্র; কিন্তু নেপালের বিরাটসংখ্যক মানুষই হলো এখনো বৌদ্ধ। আর এই বৌদ্ধধর্ম হলো তিব্বতের অনুরূপ। নেপালের সব লোক এখনো নেপালি ভাষায় কথা বলে না। নেপালি ভাষা হলো আর্যভাষা। তা লেখা হয় নাগরী অক্ষরে। কিন্তু নেপালে বহু লোক এখনো কথা বলে নেওয়ারী ভাষায়, যা হলো বৃহৎ চীনাভাষাপরিবারভুক্ত। নেওয়ারীরা হিন্দু নয়, বৌদ্ধ। গৌতম বুদ্ধ জন্মেছিলেন নেপালের লুম্বিনী শহরে। তাই অনেকে মনে করেন গৌতম বুদ্ধ আসলে ছিলেন বৃহৎ মঙ্গলীয় মানবধারাভুক্ত মানুষ। যেহেতু গৌতমবুদ্ধ ছিলেন মঙ্গলীয় মানবধারাভুক্ত মানুষ, তাই তার ধর্ম সহজেই বিস্তারিত হতে পেরেছিল বৃহৎ মঙ্গলীয় মানবধারাভুক্ত মানুষের মধ্যে। ভারতে হিন্দু ধর্মের চাপে বৌদ্ধ ধর্ম বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু তা টিকে আছে প্রধানত মঙ্গলীয় মানবধারাভুক্ত বিভিন্ন জাতির মধ্যে।
নেপালকে আগে ঠিক একটি পুরোপুরি স্বাধীন দেশ বলা যেত না। কেননা, ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হতো ভারতের ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক। কিন্তু নেপাল এখন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। কারণ, তার পররাষ্ট্রনীতি আর ভারতের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না, যদিও ভারত চেয়েছিল ভারতের দ্বারা নেপালে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। নেপাল হিন্দুরাষ্ট্র, কিন্তু নেপালের সাথে এখন ভারতের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। নেপালবাসী ঝুঁকে পড়ছে চীনেরই প্রতি। নেপালের সংস্কৃতি আসলে ভারতের সংস্কৃতির সাথে মেলে না। নেপালের ভাস্কর্যের ওপর রয়েছে তিব্বতের বিরাট প্রভাব। নেপালের বাড়িঘরের ওপর আছে চীনের বাড়িঘর তৈরির বিশেষ প্রভাব। নেপালের স্থাপত্য আর ভারতের স্থাপত্য এক নয়। প্রাচীনকালে নেপালের ব্যবসাবাণিজ্য চলেছে তিব্বতের সাথে নোলা গিরিপথ দিয়ে। এখন তা শুরু হতে যাচ্ছে রেলপথের মাধ্যমে; যে রেলপথ স্থাপিত হতে যাচ্ছে মাউন্ট এভারেস্ট বা কোমোলাংমো ভেদ করে।

নেপালের ওপর ভারত এখন আর আগের মতো চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না। কেননা, তেমন চাপ সৃষ্টি করতে গেলে বিবাদে জড়িয়ে পড়তে হবে চীনের সাথে। চীনের সাথে ১৯৬২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে হয়েছিল সীমান্তসংঘর্ষ। এই সংঘর্ষে ভারত পরাজিত হয়েছিল খুবই করুণভাবে। চীন তার দাবি অনুসারে দখল করে নিয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমে উভয় সীমান্তে ২৪০০০ বর্গকিলোমিটার, যা সে ভারতকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক নয়। আর ভারতের পক্ষেও সম্ভব নয়, সামরিক অভিযান চালিয়ে চীনের কাছ থেকে এই জায়গা দখল করে নেয়া। নেপালে তাই চীনের প্রভাব বাড়লে ভারতের পক্ষে নেপালকে আর ধমক দেয়া সম্ভব নয়। নেপাল আর এখন ভারতের বলয়ভুক্ত কোনো রাষ্ট্র নয়। নেপালে ভারতের প্রভাব কমার একটা অর্থ দাঁড়াবে বাংলাদেশেও ভারত লবির প্রভাব-প্রতিপত্তি আর আগের মতো বজায় না থাকা।

বাংলাদেশ সার্ক গঠনে উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রধানত তারই উদ্যোগে নেপালের রাজধানীতে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে সার্কের সদর দফতর। যেহেতু কাঠমুন্ডু হয়েছে সার্কের সদর দফতর, তাই এই অঞ্চলের রাজনীতিতে বেড়ে যেতে পেরেছে নেপালের ভৌগলিক গুরুত্ব। চীন একসময় চেয়েছিল নেপাল, সিকিম ও ভুটানকে একত্র করে একটি হিমালয়ান কনফেডারেশান গড়তে। ভারত এটা হতে দিতে চায় না। তাই সে দখল করে নেয় সিকিম। কিন্তু নেপাল ও ভুটানকে দখল করেতে পারে না। কেননা, রাজ্য হিসেবে নেপাল ও ভুটান ছিল অনেক বেশি স্বাধীন; ঠিক সিকিমের মতো আশ্রিত নয়। চীন বহু দিন সিকিমকে ভারতের অংশ বলে মানতে চায়নি; কিন্তু এখন সে সিকিম নিয়ে থাকছে নীরব। তার প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে নেপালকে পক্ষে পাওয়া। আর এভারেস্ট পর্বত ভেদ করে রেলপথ স্থাপন করলে এ ক্ষেত্রে চীন পেতে পারবে একটা বড় রকমের সাফল্য। চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গের মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ কেটে তারা রেলপথ নির্মাণ করতে পারবেন মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে। সুড়ঙ্গ কেটে রেলপথ করা এখন আর আশ্চর্য কিছু হয়ে নেই। ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা ভেদ করে রেলপথ স্থাপিত হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে। এখন এ বিষয়ে মানুষ যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পেরেছে। চীন এই অভিজ্ঞতাকে সহজেই তার কাজে লাগাতে পারবে।

এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গ একসময় ছিল সমুদ্রের নিচে। পরে ঘটতে পেরেছে তার উদ্ভব। এর প্রমাণ পাওয়া চলে এভারেস্ট পর্বতমালার উপরিভাগে পাওয়া প্রবালপথর থেকে। এভারেস্টের উপরিভাগে অনেকখানি হলো চুনাপাথর। কিন্তু এই চুনাপাথর সহজেই ক্ষয় হতে পারে না। কেননা, তা ঢাকা থাকে বরফের দ্বারা। যাকে বলে হিমালয় পর্বতমালা, তাতে রয়েছে অনেক রকম পাথর। এভারেস্টের গোড়ার এবং মাথার পাথর একই রকম নয়। গোড়ার পাথর হলো রূপান্তরিত শীলা, যা খুবই শক্ত। কিন্তু এখনকার কৃত কৌশলে যাকে কেটে শুড়ঙ্গ করা মোটেও কঠিন কাজ নয়। যেহেতু এভারেস্টের নিচের শীলা রূপান্তরিত কঠিন শীলা, তাই তা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনাও কম, সুড়ঙ্গ কাটতে যেয়ে। চীন বলছে সে এই সুড়ঙ্গ কাটতে যাচ্ছে নেপালের বিশেষ অনুরোধে। কেননা, নেপাল যাচ্ছে চীনের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে। ভারত এটাকে ভালো চোখে দেখছে না। কিন্তু আপাতত ভারতের এ ক্ষেত্রে কিছু করণীয় নেই। কেননা, নেপাল এখন আন্তর্জাতিকভাবে একটা স্বীকৃত স্বাধীন দেশ। সে যেকোনো দেশের সাথে স্বাধীনভাবে যেকোনো রকম চুক্তি করতেই পারে।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে ভারতীয় এয়ারটেল?

airtel

আরটিএনএন : বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে ভারতীয় সেলফোন কোম্পানি এয়ারটেল। কার্যক্রম শুরুর পর গত কয়েক বছর প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলংকার ব্যবসাও ছেড়ে দিতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য ব্যাংকারও নিয়োগ দিয়েছে ভারতীয় এয়ারটেল।

ভারতের ব্যবসায় সংবাদভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল মানি কন্ট্রোল ডটকম ও সিএনবিসি টিভি ১৮ এ খবর জানিয়েছে।

তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি আরো শক্তিশালী করতে তুলনামূলক দুর্বল ও অলাভজনক ব্যবসায় ইউনিট বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের এয়ারটেল। এরই অংশ হিসেবে এয়ারটেল বাংলাদেশ ও ভারতী এয়ারটেল লংকা বিক্রি করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে আরব আমিরাতভিত্তিক ইতিসালাত ও ফ্রান্সভিত্তিক অরেঞ্জের নাম আলোচনায় এসেছে।

বাংলাদেশে চার হাজার ও শ্রীলংকায় আড়াই হাজার টাওয়ারের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে এয়ারটেল। এগুলোও বিক্রি করে দেয়ার কথা ভাবছে অপারেটরটি। এর আগে ২০১২ সালে একই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে সফল হয়নি কোম্পানিটি।

এয়ারটেল বাংলাদেশের মুখপাত্র এ বিষয়ে জানান, এটা নিতান্তই গুজব। প্রতিষ্ঠানের নীতি অনুযায়ী এ ধরনের গুজবের বিষয়ে মন্তব্য করে না এয়ারটেল। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সেলফোন অপারেটর ভারতী এয়ারটেল বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে ২০১০ সালে। সে সময় ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে প্রতিষ্ঠা করা হয় এয়ারটেল বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ওয়ারিদের কাছে থাকা বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারও কিনে নেয় সিঙ্গাপুরে ভারতী এয়ারটেলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভারতী এয়ারটেল হোল্ডিংস লিমিটেড। এয়ারটেলের বিনিয়োগে বাংলাদেশের টেলিকম খাতে সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক গ্রাহক আকর্ষণে সম হবে বলে ধারণা করা হয়। যদিও গত পাঁচ বছরে আয় ও গ্রাহক সংখ্যায় প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে অপারেটরটি। বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর পর ইতিবাচক গ্রাহক প্রবৃদ্ধি হলেও গত বছর তা নেতিবাচক হয়ে যায়। তবে চলতি বছর আবারো ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে এয়ারটেল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক প্রবৃদ্ধি ছিল ১০২ শতাংশ, ২০১১ সালে ৫২, ২০১২ সালে ১৭ ও ২০১৩ সালে .২৭ শতাংশ। আর ২০১৪ সালে ৯.২৪ শতাংশ গ্রাহক কমে যায় প্রতিষ্ঠানটির।

তবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এয়ারটেল বাংলাদেশের গ্রাহক বেড়েছে ১৬ শতাংশের বেশি। বর্তমানে দেশের ছয় সেলফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে এয়ারটেল বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে এয়ারটেল বাংলাদেশের সংযোগ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ লাখ ৪৩ হাজার। ২০১৪ সালে মার্কেট শেয়ারও কমে আসে অপারেটরটির। ২০১০ সালে কার্যক্রম শুরুর পর প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার ছিল ৫.৭৬ শতাংশ। পরের বছরই বেড়ে দাঁড়ায় ৭.০৫ শতাংশে। ২০১২ সালে ৭.২৬ ও ২০১৩ সালে ৭.২৭ শতাংশ মার্কেট শেয়ার অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে পরের বছর এটি কমে দাঁড়ায় ৬.২৪ শতাংশ। আর চলতি বছরের জুন শেষে এয়ারটেল বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার দাঁড়িয়েছে ৬.৮৯ শতাংশ।

ভারতী এয়ারটেলের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এয়ারটেল বাংলাদেশ ও এয়ারটেল লংকা আয় করেছে প্রায় ৩৮০ কোটি রুপি। আগের বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠান দুটির আয় ছিল প্রায় ৪৩০ কোটি রুপি। প্রান্তিকটিতে এ দুটি দেশের ব্যবসা থেকে আয় কমেছে ১১ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় মূলধনি ব্যয়ও কমিয়ে আনছে ভারতী এয়ারটেল।

এশিয়ায় ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার ১৭টি দেশে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান ভারতী এয়ারটেল। ভারতে টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি সেবার পাশাপাশি রয়েছে এম-কমার্স, ফিক্সড লাইন, দ্রুতগতির ডিএসএল ব্রডব্যান্ড, আইপিটিভি, ডিটিএইচ ও লং ডিস্ট্যান্স এন্টারপ্রাইজ সেবা চালু রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তবে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে এয়ারটেল শুধু টুজি, থ্রিজি ও এম-কমার্স সেবা প্রদান করছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে বিশ্বব্যাপী ভারতী এয়ারটেলের গ্রাহক সংখ্যা ৩২ কোটি ৪৩ লাখ ছাড়িয়েছে।

সম্প্রতি আফ্রিকার বারকিনা ফাসো, শাদ, কঙ্গো ও সিয়েরা লিওনের ব্যবসা বিক্রি করে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ভারতী এয়ারটেল। এ চারটি ইউনিট বিক্রির বিষয়ে ফ্রান্সের টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান অরেঞ্জের সঙ্গে আলোচনাও করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১০ সালে আফ্রিকার বাজারে প্রবেশ করে ভারতী এয়ারটেল। তবে শুরু থেকেই এ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

ভারতের বাইরে চালু থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে গত বছর উদ্বেগ প্রকাশ করে এয়ারটেল। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এয়ারটেল বাংলাদেশ। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গ্রাহক হারানোর পাশাপাশি ভারতী এয়ারটেলের সামগ্রিক লোকসানের বোঝা বাড়ানোর পরিপ্রেেিত ভারতী এয়ারটেলের আর্থিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৩ সালে ভারতী এয়ারটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারত) হিসেবে গোপাল ভিত্তাল দায়িত্ব নেয়ার পর মুনাফার ধারায় ফিরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ভারতের এ ব্যবসায়িক সাফল্যের ধারায় ভারতী এয়ারটেলের আফ্রিকা, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিয়ে আসতে বিশেষ পদেেপর প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

হজ সেলফি নিয়ে যা বলছেন আলেমগণ

hajj-selfi

হজের মওসুমে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত থাকে পুণ্যভূমি মক্কা। কিন্তু হজের মতো ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যেও দেখা গেছে সেলফি জ্বর। হজ ও ওমরাহ করতে গিয়ে অনেকে কাবা শরিফ পেছনে রেখে ফোনে নিজেই তুলছেন ছবি। আবার তা ফেসবুকের মতো অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েও দিচ্ছেন।

সম্প্রতি হজ পালনে গিয়ে এবং মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর মতো দুটি পবিত্র মসজিদের ভেতরে গিয়ে হাজার হাজার মুসল্লি সেলফি তুলেছেন।

সেলফির এ জ্বর ভাবিয়ে তুলেছে ইসলামী শরিয়াহ-বেত্তাদের। হজের সময় এই সেলফি তোলার অনুমতি থাকা, না-থাকা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা। অনলাইনে ব্লগ, ফেসবুক, গুগল প্লাস ও টুইটারে চলছে সমালোচনার ঝড়।

সেলফির কারণে হজের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে ভ্রষ্ট হচ্ছেন মুসল্লিদের অনেকেই, এমনটা মনে করছেন আলেমগণ। বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ও সৌদি আরবে হজ আদায়ে যাওয়া বহু ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে পর্যটকদের মতো আচরণ বলে মন্তব্য করছেন। অনেকেই হতাশ ও বিরক্ত।

এমন পরিস্থিতিতে অপ্রয়োজনে হজ ও ওমরাহর সময় সেলফি না তুলতে আহ্বান জানিয়েছে ইসলামী চিন্তাবিদরা। তারা সেলফি তোলাকে ‘পর্যটকসুলভ আচরণ’ বলে সমালোচনা করেছেন।

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, হজযাত্রীরা পর্যটক নন, বরং পুণ্যার্থী। ছবি তোলা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ আছে। কিন্তু হজের সময় এমন কাজের বিরুদ্ধে অনেকেই একমত। তাই সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকা উচিত।

অনলাইন আরব নিউজে ‘সে নো টু হাজ সেলফি’ অর্থাৎ ‘হজ সেলফিকে না বলুন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে হজে সেলফির আগ্রাসন এবং এব্যাপারে ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমগণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

রাজধানী রিয়াদের ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ের এক শিকিা ২৭ বছর বয়সী জাহরা মোহাম্মদ বলছিলেন, মদীনায় আমি খেয়াল করলাম একটি পরিবারের সদস্যরা সূর্যের দিকে মুখ করে আছেন। পরিবারটির সদস্যরা এমনভাবে হাত তুলেছিলেন যেন, মনে হচ্ছিল তারা দোয়া করছেন। আমি বুঝতে পারিনি, তারা ঠিক কি করছিলেন। কিন্তু, তখন আমি দেখলাম একজন সামনে গিয়ে তাদের ছবি তুলছেন।

জাহরা বলছিলেন, আমি মসজিদ আল-হারামে কাবার সামনে দাঁড়িয়ে হাজীদের সেলফি তুলতে দেখেছি। পরে এ সেলফিগুলো তারা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ফলে, এটা পরিণত হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ইভেন্টে এবং হাজীরা তাদের ইবাদতের যে মাহাত্ম্য, সেটা নষ্ট করলেন বিনম্র-অহমিকার মাধ্যমে।

মক্কা ও মদীনার পবিত্র মসজিদ দুটিতে নিজেদের প্রতিটি পদপে স্থির ছবি বা ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে ক্যামেরার ফ্রেমে ধরে রাখার যে আকাক্সা তৈরি হয়েছে এবং অমূল্য এ মুহূর্তগুলো পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, সহকর্মীদের দেখানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারের যে হিড়িক পড়েছে, তাতে আগের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক হাজী মসজিদগুলোতে তাদের ক্যামেরা ফোন ব্যবহার করছেন। বিনয় বা বিনম্রতা ও প্রশান্তি লাভের েেত্র হজে গিয়ে এ ধরনের আচরণ প্রতিবন্ধকতা হিসেবেই কাজ করে বলে মনে করেন অনেকেই। কারণ, অধিকাংশ মুসল্লিই জীবনে একবারের জন্য হজ পালন করেন।

জেদ্দাভিত্তিক ইসলামী আলেম শেখ আসিম আল-হাকীম বলছিলেন, কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া ছবি তোলা ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও, যখন হজের প্রকৃত  অর্থ ও তাৎপর্যের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়, তখন কোন বিতর্কই সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়। এটা অকৃত্রিমতা ও সুন্নত তরিকা অনুসরণের ভিত্তিমূলে প্রতিষ্ঠিত।

তিনি আরো বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন হজে গিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন: হে আল্লাহ, আমি এমন একটি হজ পালন করতে চাই, যা কোন দম্ভ প্রকাশ বা লোক দেখানো হবে না। এ ধরনের সেলফি তোলা ও ভিডিও করা আমাদের নবীজীর ইচ্ছার পরিপন্থী।

বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম শেখ আবদুল রাজ্জাক আল-বদর হজের সময় ছবি তোলা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, মিকাতে পৌঁছে নবীজী (সা.) বলতেন, হে আল্লাহ, এ হজকে নিজেকে জাহির ও অন্যকে শোনানোর চেষ্টার ঊর্ধ্বে রাখো। কিন্তু, মিকাতে বহু মানুষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ছবি তুলছেন। তাওয়াফে ও আরাফাতে এবং জামারাতে পাথর নিেেপর সময়ও তারা নিজেদের ছবি তুলছেন। বাড়ি ফিরে তারা বলেন : এসো- দেখো আমাকে। এই যে আরাফাতে আমি, মুজদালিফায় এটা আমি!

তিনি বলেন, আমরা কিছু মানুষকে দেখেছি, যারা ছবি তোলার জন্য মোনাজাতের ভঙ্গিতে হাত ওপরে উঠিয়ে ছবি তোলেন। বিনয়, খোদাভীতি ও প্রশান্তি লাভের ভঙ্গিতে তারা ছবি তোলেন। ছবি তোলা শেষ হলে, তারা হাত নামিয়ে ফেলেন। স্মার্টফোনের বিক্রি ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াকেই এজন্য আংশিকভাবে দায়ী মনে করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও মসজিদগুলোর ভেতরে ক্যামেরা ফোন নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল। তবু কেউ কেউ গোপনে ফোন নিয়ে ঢুকে পড়তেন। কিন্তু, কর্তৃপ বিধি-নিষেধটি শিথিল করে দেয়ায়, এখন কাবার সামনে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। তবে মসজিদগুলোর প্রবেশমুখে রীরা হাজীদের পেশাদার ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে বাধা প্রদান করেন।

জেদ্দায় বসবাসকারী আহমাদ নামে একজন বলছিলেন, জুমার দিন আমি নামাজ পড়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু, কিছু মানুষ ক্যামেরা নিয়ে খুতবার ভিডিও ধারণ করতে আমার সামনে দিয়ে আসতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে নামাজের মধ্যে মানসিক প্রশান্তি কিভাবে বিনষ্ট হয়, তা সহজেই অনুমেয়। গত বছর ওমরাহ হজ পালনের সময় আমি হাজার হাজার মুসল্লিকে মসজিদে হারামের ভেতর ঢুকতে দেখেছি। অধিকাংশের হাতে ক্যামেরা ফোন থাকায় তাদের থামানো ভীষণ কঠিন। হজ এজেন্সিগুলোর অবশ্যই উচিত তাদের সদস্যদের অতিরিক্ত ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে হজের মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া।