সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান ওআইসির

OIC
বিশ্বের শীর্ষ ইসলামিক সংস্থা ওআইসি কঠোর ভাষায় প্যারিস হামলার নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদ মোকবিলায় সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। খবর এএফপিল।
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) মহাসচিব আয়াদ মাদানি বলেছেন, আাান্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে গোটা মানবতার প্রধান শত্রুতে পরিণত হওয়া সন্ত্রাসবাদের অভিশাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে একটি সম্মিলিত যৌথ পদক্ষেপে যুক্ত হতে হবে।
৫৭-জাতি সংস্থার প্রধান বলেন, তিনি কঠোর ভাষায় এই হামলার নিন্দা জানান এবং ফ্রান্স সব সময় স্বাধীনতা ও সমতার যে মূল্যবোধের পক্ষে কাজ করছে তা সহ যাবতীয় বিশ্বজনীন মানবাধিকারের পরিপন্থী যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। মাদানি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দায় ওআইসির নীতিগত ও অটল অবস্থান এবং এই কঠিন ও বেদনাঘন মুহূর্তে ফ্রান্সের জন্য সংস্থার অবিচল সংহতি ও সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

এবার ওয়াশিংটনে হামলার হুমকি আইএসের

IS USA
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইসলামিক স্টেট। সোমবার একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এই হুমকি দিয়েছে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি। ভিডিও বার্তায় বলা হয়, সিরিয়ায় বিমান হামলাকারী সবগুলো দেশেই অনুরূপ হামলা চালনো হবে।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে দেখা যায়, ‘যারা ক্রুসেডে অংশ নিচ্ছে আমরা সে রাষ্ট্রগুলোকে বলে দিতে চাই, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের জন্যও সেদিন আসছে যেমনটি আমরা ফ্রান্সের কেন্দ্রস্থলে ঘটিয়েছি। শপথ করে বলছি, আমরা আমেরিকায়ও হামলা চালাব এবং তা হবে ওয়াশিংটনে।’
শুক্রবার রাতে প্যারিসে সিরিজ হামলায় ১২৯ জন নিহত ও আরো ৩৫২ জন আহত হন। হামলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সাতজন নিহত হয়েছেন। এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজছে ফরাসী পুলিশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই ছিল ফ্রান্সের মাটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
গত মাসে মিসরের সিনাইয়ে রাশিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত করার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল আইএস। ওই ঘটনায় বিমানে থাকা ২২৪ জনের সকলেই নিহত হয়েছিলেন। তবে বিমান ধ্বংসের ঘটনায় জঙ্গি সংগঠনটির জড়িত কিনা সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি মস্কো। সূত্র: রয়টার্স, ইনডিপেন্ডেন্ট

নতুন উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছে চীন ও ইউএই: সবুজ অর্থনীতির দিকে ঝুঁকছে পৃথিবী

Green

ক্রমশ সবুজ অর্থনীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে বিভিন্ন দেশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের উদ্যোগ অনেক বেশি ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি করবে। সবুজ জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাম্প্রতিক দুটি ঘোষণা এসেছে চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। খবর সিনহুয়া ও অ্যারাবিয়ান বিজনেস।

চীনের নীতিনির্ধারণী সংস্থা স্টেট কাউন্সিল গত সপ্তাহে একটি সংশোধিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। ওই পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং প্রকৃতির ক্ষতি না করে বিদ্যমান ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। একই সময় জাতিসংঘে টেকসই উন্নয়ন সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, পরিচ্ছন্ন ও সবুজ বিকল্পের মাধ্যমে বিশ্বের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে তার দেশ একটি বৈশ্বিক জ্বালানি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী।

তিয়ানজিন গ্রিন সাপ্লাই চায়না সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মু লিংলিং বলেন, চীনে সবুজ অর্থনীতির প্রতি নজিরবিহীন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি বড় আকারের বিনিয়োগ ও বিপুল সংখ্যায় ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এইচএসবিসির এক প্রতিবেদনেও চীনের এ প্রবণতার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, সবুজ অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলায় জোর দিচ্ছে চীন। এজন্য দেশটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি করে সবুজ পণ্য নিয়ে আসতে প্রণোদিত করছে। চীন সরকার ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি সবুজ বন্ড এবং সবুজ তহবিল প্রতিষ্ঠা করতে চাপ দিচ্ছে।

এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানিমন্ত্রী সুহাইল আল মাজরুই বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় ২০২১ সাল নাগাদ সবুজ জ্বালানি খাতে আমিরাতের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৫ বিলিয়ন ডলারে।

মাজরুই বলেন, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শতভাগ জ্বালানি আসে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। তাদের লক্ষ্য, ২০২১ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভূমিকা ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনা। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাই আমরা, কারণ বেশির ভাগ দেশ থেকে তা আমদানি করা যায়।

তিনি আরো বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ আমিরাতের ৩০ শতাংশ জ্বালানি আসবে পরমাণু ও সৌরশক্তি থেকে। ২০২০ সালের মধ্যে পারমাণবিক জ্বালানি থেকে ২০-২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ (৫ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট) উৎপাদন করবে আমিরাত। উপসাগরীয় অঞ্চলে জ্বালানির চাহিদা ২০১৪ সালে ৯ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বৃদ্ধি উদ্বেগজনক।

আল মাজরুই বলেন, আপনি যদি সংযুক্ত আরব আমিরাতের গত ১০ বছরের জ্বালানি চাহিদার ইতিহাস দেখেন, তবে দেখতে পাবেন গড়পড়তা প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ। তবে বছরভেদে এটি ভিন্ন হতে পারে। কোনো কোনো সালে চাহিদা বেড়েছে। ২০১৪ সালে জ্বালানি চাহিদা বেড়েছে ৯ শতাংশ।

জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের ভর্তুকির কারণে নাগরিকদের মধ্যে জ্বালানি ব্যবহারে দায়িত্বহীনতা দেখা দেয়। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নাগরিকদের মধ্যে জ্বালানি ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

অস্ট্রেলিয়ার না আসার নেপথ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই তরুণী

জঙ্গি হামলা আশঙ্কা ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বাংলাদেশে না আসার নেপথ্যে ‘অনুঘটক’ হিসেবে লন্ডনপ্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই তরুণীকে শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। রুমানা হাশেম ও অজান্তা দেব রায় নামে ওই দুই তরুণী লন্ডনে বসে টুইটারে বাংলাদেশের ২১ জন মুক্তমনা ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখকের হিটলিস্ট প্রকাশ করেন। এরই সূত্র ধরে বিশ্বের কয়েকটি প্রভাবশালী গণমাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বিষয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করে। ওই সংবাদগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশে ক্রিকেট টিম না পাঠানোর সিদ্ধান্তনেয়। আর এ সিদ্ধান্তগ্রহণের আগে দেশটি বন্ধুভাবাপন্ন কয়েকটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে শলাপরামর্শও করে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়।

jjjjjjjjjjjjj

এদিকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম বাংলাদেশে না আসায় ভাবমূর্তির দিক মাথায় রেখে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে— প্রাথমিকভাবে ওই গোয়েন্দা সংস্থার বদ্ধমূল ধারণা, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই লন্ডনী তরুণীর একটি টুইট বার্তার কারণেই জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ পায়। এর ফলে অস্ট্রেলিয়া দল নিরাপত্তা ইস্যুতে পিছু হটে। এ সংক্রান্তএকটি গোপন প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে।

গোয়েন্দারা রুমানা হাশেম ও অজন্তাদেব রায়ের গ্রামের বাড়িসহ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে। এ ছাড়া গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের দল শিগগির লন্ডনে যাবে। সে দেশের আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় দুই তরুণীর কাছে ২১ জনের হিটলিস্টের সূত্র সম্পর্কে জানতে চাইবেন গোয়েন্দারা। রুমানার টুইট পেজে নিজেকে বর্ণবাদবিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট-সমাজবিজ্ঞানী উল্লেখ করেছেন। তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন,  ওই দুই তরুণী ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তমনের লেখালেখি করেন। কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৪৭ মিনিটে রুমানা টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি সংবলিত একটি টুইট করেন। টুইটে ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, রুমানা হাশেম তার এক বন্ধুর কাছ থেকে একটি হিটলিস্ট পেয়েছেন। আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের হিটলিস্টে নাম ও বর্তমান অবস্থানের ঠিকানায় রয়েছেন প্রখ্যাত লেখক ও কলামনিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী (লন্ডন), দাউদ হায়দার (জার্মানি), তসলিমা নাসরিন (ভারত), নিহত ব্লগার অভিজিতের স্ত্রী বন্যা আহমেদ (আমেরিকা), আসিফ মহিউদ্দিন (জার্মানি), অনন্য আজাদ (জার্মানি), ওমর ফারুক লুকস (জার্মানি), ফারজানা কবির খান (জার্মানি), ছদ্মনামধারী ‘নাস্তিকের ধর্মকথা’ (জার্মানি), সুব্রত শুভ (জার্মানি), ফড়িং ক্যামেলিয়া (জার্মানি), কামরুল হাসান (লন্ডন), সুশান্তদাশগুপ্ত (লন্ডন), আরিফুর রহমান (লন্ডন), অজন্তা দেব রায় (লন্ডন), মনির হোসেন (বার্মিংহাম), শান্তনু আদিব (লন্ডন), নিঝুম মজুমদার (লন্ডন), রুমানা হাশেম (লন্ডন), রায়হান আবির (কানাডা) ও নির্ঝর মজুমদার (সুইডেন)।

সূত্র জানায়, রুমানার ওই টুইটের কিছুক্ষণ পর অজন্তা দেব রায় পোস্টের নিচে মন্তব্য করেন। ‘আমি বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।’ পুলিশের ধারণা, অজন্তা লন্ডন পুলিশকে এ ধরনের তথ্য জানান। আর রুমানাকে ২১ জনের হিটলিস্টের তালিকাও অজন্তা সরবরাহ করেন। এ জন্য রুমানার পাশাপাশি গোয়েন্দারা অজন্তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন।

রুমানার টুইটার পেজে দেখা যায়, ওই বার্তা টুইট করার দুদিন পর, অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর, ‘জাতিসংঘ এনজিও কমিটি অন ফ্রিডম অব রিলিজন অর বিলিফ’-এর প্রেসিডেন্ট মিকায়েল ডি ডোরা (গরপযধবষ উব উড়ৎধ) একই টুইটে মন্তব্য করেন। তবে মিকায়েল তার মন্তব্যে রুমানার কাছে হিটলিস্টের তথ্যসূত্র জানতে চান। জবাবে পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর রুমানা একই পোস্টের নিচে সূত্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ও পুলিশের কথা উল্লেখ করেন। তবে বাংলাদেশ সরকার ও পুলিশ এ ধরনের কোনো হিটলিস্টের কথা স্বীকার করেনি।

এদিকে রুমানার টুইটে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। টুইট ঝড়ের ২০ দিন পর বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) কর্তৃক ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখকদের হিটলিস্ট প্রকাশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে লন্ডনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশি একটি ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন অসাম্প্রদায়িক ব্লগার, লেখক ও সারা বিশ্বে বসবাসকারী অ্যাক্টিভিস্টদের তালিকা তৈরি করেছে, যাদের হত্যা করা হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘ইসলামী জঙ্গিদের এই তালিকা সহিংসতা আকারে রূপ নিলে তা দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা বাড়ানোসহ আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তারলাভ করতে পারে।’ এতে বলা হয়, হিটলিস্টে থাকা লন্ডনভিত্তিক টার্গেটকৃত ব্লগারদের মধ্যে ৭ জন জার্মানি, ২ জন যুক্তরাষ্ট্র, ১ জন কানাডা এবং ১ জন সুইডেন আছেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা গত ১৮ মাসে সিরিজ হত্যা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গার্ডিয়ানের একদিন পর অন্য একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএন। সিএনএন টেলিভিশন ও অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এক্সট্রিমিস্ট ইন বাংলাদেশ পাবলিশ গ্লোবাল হিটলিস্ট অব ব্লগারস অ্যান্ড রাইটার্স’। প্রতিবেদনে হিটলিস্টে থাকা ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ না করলেও এতে বলা হয়, যারা হুমকির মধ্যে রয়েছেন তারা যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। এতে হামলা করতে প্রস্তুত জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশের আনসারউল্লাহ বাংলা
টিমকে দায়ী করা হয়।

গার্ডিয়ান ও সিএনএনে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার একদিনের মাথায় রুমানা হাশেমের প্রকাশ করা হিটলিস্টে থাকা ২১ জনের হুবহু নাম ও তাদের অবস্থানের ঠিকানা সংবলিত অন্য একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের ইন্ডিয়া টিভি। ইন্ডিয়া টিভির অনলাইনে বলা হয়, বাংলাদেশের জিহাদি গ্রুপ আনসারউল্লাহ বাংলা টিম ব্লগারদের গ্লোবাল হিটলিস্ট প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তসলিমা নাসরিনের নামও।

ইন্ডিয়া টিভিতে বলা হয়, ইসলামের শত্রু, মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধিতাকারী, নাস্তিক্যবাদ, ইসলাম ধর্মত্যাগী, শাহবাগী ব্লগার, ভারতের পক্ষ নিয়ে অভিনয়সহ নানা কারণে হিটলিস্টে থাকা এই ২১ জনকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম টার্গেট করেছে।

গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, রুমানা হাশেম, অজন্তা দেব রায় এবং বৈশ্বিক মিডিয়ায় ২১ জনের হিটলিস্ট প্রকাশ করা হলেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম একে মিথ্যা বলে আসছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নিজস্ব ওয়েবপেজের দাবিদার ‘জিহাদোলজি’তে ২১ জনের হিটলিস্টকে মিথ্যা বলে ঘোষণা করে বলা হয়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে প্রকাশিত তথাকথিত ‘বৈশ্বিক হিটলিস্ট’ এর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব কারণে গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন, রুমানা ও অজন্তার টুইট এবং লন্ডনী গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিথ্যা হিটলিস্ট নিয়ে কথা বলার পর তা বিশ্বমিডিয়ায় চলে আসে। যে কারণে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উৎপাত আছে মনে করে নিজেদের ক্রিকেট টিমকে নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ সফরে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া।

ইসলামিক স্টেট সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ

IS

ইসলামিক স্টেটের সাথে সংশ্লিষ্ট ৩৫ জন ব্যক্তি ও গোষ্ঠির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গিগোষ্ঠিটির বিরুদ্ধে এটিই এযাবতকালের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অবরোধ। এই অবরোধটি আরোপ করা হয়েছে ইসলামিক স্টেটের কার্যক্রম ব্যহত করার উদ্দেশ্যে যার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে আইএসের অর্থনৈতিক, কৌশলগত এবং সদস্য সংগ্রহের কর্মকাণ্ড। বিস্তৃত এই অবরোধের তালিকায় রয়েছে মিশরের আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রুশ বিভিন্ন উপদল পর্যন্ত।

এছাড়াও ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তান থেকে লিবিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ব্যক্তিবর্গও রয়েছে এই তালিকায়। একইসাথে ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের কয়েকজন নাগরিককেও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদের কয়েকজনের নাম এসপ্তাহেই জাতিসংঘ ঘোষিত আল-কায়েদা অবরোধ তালিকায়ও উল্লেখ করা হয়েছিল। ওয়াশিংটন থেকে এমন এক সময়ে এই ঘোষণা দেয়া হল যখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে জাতিসংঘের একটি সম্মেলন চলছে, যার সভাপতিত্ব করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

সম্মেলনে বারাক ওবামা বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যেকোন উপায়ে ইসলামিক স্টেটকে প্রতিহত করতে কাজ চালিয়ে যাবে। তবে তিনি এও বলেন যে, ঐ সংগঠনটি ঘুরে দাড়াচ্ছে এবং আরো বড় হচ্ছে। মার্কিন কংগ্রেসের নতুন একটি গবেষণায়ও বলা হয়েছে যে, সিরিয়া এবং ইরাকে প্রায় ৩০,০০০ বিদেশী যোদ্ধা এরই মধ্যে আইএস এবং অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠির সাথে যোগ দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামিক স্টেটের আরেকটি শক্তি হচ্ছে যে তারা তাদের দখলকৃত এলাকা থেকেই প্রচুর পরিমাণ অর্থ আয় করছে এবং শুধুমাত্র তেল ব্যবসা থেকেই প্রতিবছর তাদের আয় প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

‘স্বাধীন’ সিকিম ও একজন লেন্দুপ দর্জি

Sikim

মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান

লেন্দুপ দর্জি আলোচিত নাম। আলোচিত চরিত্র। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক। ভারতীয় আধিপত্যবাদের সেবাদাস। ২০০২ সালে ভূষিত হন ভারতের ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে। এক সময়ের জনপ্রিয় এই নেতাকে দেশের মানুষ সম্মানের সাথে ডাকত কাজীসাব বলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লিতে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতেন। কিন্তু শেষ জীবনে ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেও তাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে। বেঁচে ছিলেন ১০২ বছর। দীর্ঘ দিন লিভারের জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিঃসঙ্গ, নিন্দিত ও ভীতসন্ত্রস্ত জীবনযাপন শেষে লেন্দুপ দর্জি মৃত্যুবরণ করেন।
তার পুরো নাম কাজী লেন্দুপ দর্জি খাং শেরপা। জন্মেছিলেন ১৯০৪ সালের ১১ অক্টোবর পূর্ব সিকিমের পাকিয়ং এলাকায়। মারা যান ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই।

৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী স্বাধীন সিকিম এখন ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। আয়তন সাত হাজার ৯৬ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ছয় লাখ সাত হাজার। সিকিমের ভূ-কৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজ্যের উত্তরে চীন, পশ্চিমে নেপাল, পূর্বে ভুটান ও দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং। সিকিম-তিব্বত (চীন) বাণিজ্যপথ ‘না থুলা পাস’ আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বহন করে। সামরিক গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর সিকিমের কাছেই। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিকে সিকিমের অবস্থান। ঢাকা থেকে সড়কপথে রাজধানী গ্যাংটকের দূরত্ব ৬৫৪ কিলোমিটার। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের বিদায়ের পর মনিপুর, ত্রিপুরা, কুচবিহারসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদান করে অথবা যোগদানে বাধ্য করা হয়।

ব্রিটেনের কাছে সিকিম স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছিল
সিকিমের স্বাধীন রাজাদের বলা হতো চগওয়াল। ভারতে ব্রিটিশ শাসন শুরুর আগে সিকিম তার পার্শ্ববর্তী নেপাল আর ভুটানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। ব্রিটিশরা আসার পর তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নেপালের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সিকিম। এ সময় রাজা ছিলেন নামগয়াল। কিন্তু ব্রিটিশরা তিব্বতে যাওয়ার জন্য এক সময় সিকিম দখল করে নেয়, ১৮৮৮ সালে রাজা নামগয়াল আলোচনার জন্য কলকাতা গেলে তাকে বন্দী করা হয়।
১৮৯২ সালে তাকে মুক্তি দিয়ে সিকিমের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়া হয়। প্রিন্স চার্লস ১৯০৫ সালে ভারত সফরে এলে চগওয়ালকে রাজার সম্মান দেয়া হয়। চোগওয়ালপুত্র সিডকং টুলকুকে অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করতে পাঠানো হয়। টুলকু নামগয়াল ক্ষমতায় বসে সিকিমের ব্যাপক উন্নতি করেন। ব্রিটিশের কাছে সিকিম তার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছিল।

গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে রায় দেয়
ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিরুদ্ধে রায় দেয়। ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু সিকিমকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর সিকিমের গুরুত্ব বেড়ে যায়। ১৯৬৩ সালে থাসি নামগয়াল এবং ১৯৬৪ সালে নেহরু মারা গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। চগওয়াল হন পাল্ডেন থন্ডুপ নামগয়াল। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সিকিম দখল করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তিনি কাজে লাগান লেন্দুপ দর্জিকে।

সিকিম ছিল ব্রিটেনের আশ্রিত রাষ্ট্র
হিমালয়ের পাদদেশে ছোট্ট স্বাধীন দেশ সিকিমকে ভারতীয় ইউনিয়নের অঙ্গীভূত করার বিল ভারতীয় পার্লামেন্টে আনা হয় ১৯৭৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। ওই বিল পাস হয় ৩১০-৭ ভোটে। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই-এম) বিপক্ষে ভোট দেয়। এবং সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের মে মাসে সিকিমকে পাকাপোক্তভাবে একটি অঙ্গরাজ্য করা হয়। এর আগে ব্রিটিশ ভারতে সিকিম ছিল একটি আশ্রিত রাষ্ট্র।
স্বভূমিজাত লেপচা উপজাতীয়রা সিকিমের জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও পোশাক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তিব্বত থেকে ভুটিয়ারা ও নেপাল থেকে নেপালিরা এসে বসতি স্থাপন করে। সিকিমের তিনটি ভাষা এখন প্রধান-লেপচা, ভুটানি ও নেপালি।
চতুর্দশ শতক থেকে নামগিয়াল বংশ সিকিমে রাজত্ব করে আসছিল। প্রথম শাসক পুনটমং নামগিয়াল। ১৬৪২ সালে তাকে চগিয়াল উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যার অর্থ ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণ করে যিনি রাজকার্য পরিচালনা করেন। সর্বশেষ চগিয়ালকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় ১৯৭৫ সালে।

প্রথমে ভারত প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেয়
৭২৯৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই ছোট্ট দেশটির রাজধানী গ্যাংটক। ১৮৮৬ সালে এক চুক্তির অধীনে সিকিম আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে যোগ দেয়। ১৮৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ছেড়ে চলে গেলে ওই চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালে ভারতের সাথে সিকিমের চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে সিকিমকে ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়। চুক্তির অধীনে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপনা দেখাশোনার পুরো কর্তৃত্ব ভারত নিয়ে নেয়।
চগিয়াল ২৪ সদস্যের কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশের শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। এর মধ্যে ১৮ জন নির্বাচিত এবং ছয়জন চগিয়াল মনোনীত। কাউন্সিলে তিনটি দলের প্রতিনিধি ছিল ন্যাশনাল পার্টি, সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস ও সিকিম জনতা কংগ্রেস।

ভারতীয় পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দিতে বাধ্য হন চগিয়াল
১৯৭৩ সালের মার্চ-এপ্রিলে ন্যাশনাল কংগ্রেস ও জনতা কংগ্রেস রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি তোলে। এই দাবিতে আন্দোলন দিনে দিনে তুমুল হতে থাকায় চগিয়ালের অনুরোধে ভারতীয় পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ওই ১৯৭৩ সালের ১৩ এপ্রিল ঘোষণা করা হয় যে, চগিয়াল রাজনৈতিক সংস্কার মেনে নিতে রাজি আছেন। এ ছাড়া তার আর কোনো উপায়ও ছিল না। কারণ তিনি স্পষ্টই অনুধাবন করেন এই আন্দোলনের পেছনের শক্তি কে? পরে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা স্বীকার করেছে যে, আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল। সংস্কারে রাজি না হলে সিংহাসন থেকে উৎখাত করা হবে, এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন নিশ্চিত। তাই সিকিমের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টায় রাজনৈতিক সংস্কারের অঙ্গীকার করেন। অঙ্গীকার মোতাবেক ১৯৭৪ সালের জুন সিকিম রাষ্ট্র আইনে পরিবর্তন আনা হয়। ওই আইনের অধীনে চগিয়ালের সার্বভৌম ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তিনি হন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। অবশ্য আইন পরিষদে পাস হওয়া আইন অনুমোদনে ক্ষমতা তাকে দেয়া হয়। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।
সিকিম হত্যার উদ্যোগ নেন লেন্দুপ দর্জি
রাজনৈতিক সংস্কার অধীন ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই সিকিমে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। দলটি আইন পরিষদের ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসন পায়। দলের প্রধান কাজী লেন্দুপ দর্জি হন প্রধানমন্ত্রী। ভারত এটাই চেয়েছিল। কারণ কাজী লেন্দুপ দর্জি তো তাদেরই লোক।
এই নির্বাচনের পর সিকিমকে ভারতকে অঙ্গীভূত করার প্রস্তুতি নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর জন্য একটা বৈধতার প্রলেপ দরকার। সেটা করে দেন কাজী লেন্দুপ দর্জি। ১৯৭৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বললেন, ভারতের দুই পরিষদ লোকসভা ও রাজ্যসভায় সিকিমের প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করেও সিকিমকে আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদায় রাখা যেতে পারে।

লেন্দুপ দর্জি
লেন্দুপ দর্জি যেহেতু ৩২টি আসনের ৩১টি আসনের নেতা, তার মতামতই তো সিকিম জনগণের মতামত। সুযোগটা হাতছাড়া করল না ভারত। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫০ সালের চুক্তি, যাতে সিকিমকে ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়, তা বাতিল করল। সিকিমকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করার বিল আনা হলো পার্লামেন্টে। এই বিল সম্পর্কে চগিয়াল এক বিবৃতিতে বললেন, ‘সিকিমের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব, যার নিশ্চয়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল ১৯৫০ সালের চুক্তিতে, তা সিকিম জনগণের সম্মতি ছাড়াই এবং অজ্ঞাতে ভারতের পার্লামেন্টে সিকিমের প্রতিনিধি নেয়ার ত্বরিত পদক্ষেপে অস্বীকার করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠানো এক বার্তায় চগিয়াল বলেছেন, বর্তমান পদক্ষেপ, যা হবে ‘১৯৫০ সালের চুক্তির একপার্শিক বাতিলের শামিল এবং ভারতের সাথে সিকিমের একীকরণ।’
তিনি বলেন, ‘ভারত-সিকিম সম্পর্কের সর্বোচ্চ আশ্বাস দেয়া হয় ভারত প্রদত্ত সিকিমের অস্তিত্ব বজায় রাখার রক্ষাকবচের মাধ্যমে।’ তার এই বিবৃতিটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক আমৃতবাজার পত্রিকা ১৯৭৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর, সোমবার প্রকাশ করে।

চগিয়ালের বার্তা ছিল অরণ্যে রোদন
চগিয়ালের এই বার্তা অরণ্যে রোদনের শামিল। অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে ফেলে সিকিমকে ভারতের অংশ করে নেয়া হলো। এ ঘটনায় ভারত তখন সারা বিশ্বে নিন্দাবাদ কুড়ায়। প্রতিবাদ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। প্রতিবাদে সিকিম দখল করে নেয়ার অভিযোগ করা হয়। কিন্তু চীন ছাড়া জাতিসঙ্ঘের বেশির ভাগ সদস্যরাষ্ট্র সিকিমের এ পরিবর্তনকে দ্রুত অনুমোদন করে।

রাজতন্ত্র বিলোপ হয় বিনা বিরোধিতায়
নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেটের ওপর ভর করে লেন্দুপ দর্জি নতুন গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা পান। চগিয়াল আর লেন্দুপ দর্জির সাপে নেউলে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ভারত পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মানচিত্র মুছে ফেলার মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে এক মুহূর্তও দেরি করেনি। কাউন্সিল অব মিনিস্টারের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দর্জির ইচ্ছায় পার্লামেন্টে বিনা বিরোধিতায় রাজতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক অবসান করা হয়। সিকিমের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেন্দুপ দর্জি ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার এবং স্টেটহুড স্ট্যাটাস পরিবর্তন করার আবেদন জানান। ১৪ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিমে ভারতীয় সেনাদের ছত্রছায়ায় এক গণভোট হয়। লেন্দুপের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখানো হয় সাজানো গণভোটের ফলাফলে। ২৬ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিম ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। মৃত্যু হয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। ১৬ মে ১৯৭৫ সরকারিভাবে ভারত ইউনিয়নভুক্ত হয় এবং লেন্দুপ দর্জিকে করা হয় সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। রাজতন্ত্রের পতনের ফলে ‘চগিয়াল’ পদের অবসান ঘটে। একটি স্বাধীন দেশ হত্যা করে লেন্দুপ দর্জি প্রধানমন্ত্রী থেকে হলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত লেন্দুপ দর্জি সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আর ভারতের অঙ্গীভূত হওয়ার সাথে সাথে তার দলও ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস দলে বিলীন হয়ে যায়।

পুরো নিয়ন্ত্রণের জন্য নেয়া হয় সামরিক অভিযান
সিকিমে ভারত সামরিক অভিযান শুরু করার আগে দেশটিতে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ইন্দিরা সরকার ভারতীয় বাহিনী পাঠানোর অজুহাত হিসেবে রাজার নিরাপত্তার কথা জানিয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজপ্রাসাদের সামনে দাঙ্গা ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ কাজে তারা ব্যবহার করে লেন্দুপ দর্জিকে।
রাজতন্ত্র অবসানের পর সিকিম দখলে ভারতীয় সেনারা মুহুর্মুহু গুলি চালায়। প্রকাশ্য দিবালোকে সামরিক ট্রাকের গর্জন শুনে সিকিমের চগিয়াল দৌড়ে এসে দাঁড়ান জানালার পাশে। তিনি দেখেন, ভারতীয় সৈন্যরা রাজপ্রাসাদ ঘিরে ফেলেছে। মেশিনগানের মুহুর্মুহু গুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজপ্রাসাদের ১৯ বছর বয়সী প্রহরী বসন্ত কুমার ছেত্রি ভারতীয় সেনাদের গুলিতে নিহত হন। আধা ঘণ্টার অপারেশনেই ২৪৩ প্রহরী আত্মসমর্পণ করে। বেলা পৌনে ১টার মধ্যেই ‘অপারেশন সিকিম’ শেষ হয়। প্রহরীদের কাছে যে অস্ত্র ছিল তা দিয়ে ভারতীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সময় লড়াই করা যেত। কিন্তু রাজা ভুগছিলেন সিদ্ধান্তহীনতায়। তিনি আরেকটি সুযোগ হারালেন। বেইজিং ও ইসলামাবাদের কাছে জরুরি সাহায্য চাওয়ার জন্য রাজপ্রাসাদে ট্রান্সমিটারও বসানো ছিল। তিনি সাহায্য কামনা করে বার্তা পাঠালে চীনা সৈন্যরা প্রয়োজনে সিকিমে ঢুকে চগিয়াল লামডেনকে উদ্ধার করতে পারত। কিন্তু রাজা সেটাও করতে ব্যর্থ হন। আত্মসমর্পণকারী রাজপ্রহরীদের ভারতীয় সেনাদের ট্রাকে তোলা হয়। প্রহরীরা তখনো গাইছিল ‘ডেলা সিল লাই গি, গ্যাং চাংকা সিবো’ (আমার প্রিয় মাতৃভূমি ফুলের মতো ফুটে থাকুক)। কিন্তু ততক্ষণে সিকিমের রাজপ্রাসাদে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে ভারতীয় জাতীয় পতাকা। নামগিয়াল সাম্রাজ্যের ১২তম রাজা চগিয়াল লামডেন তখন প্রাসাদে বন্দী।
বহির্বিশ্বের সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়, বি এস দাশকে ভারত সরকার সিকিমের প্রধান প্রশাসক নিয়োগ করে।

সিকিমের ঘটনা বিশ্বকে জানান এক মার্কিন পর্বতারোহী
ভারতীয় আমেরিকান এক পর্বতারোহী গোপনে সিকিম প্রবেশ করে দেশটির স্বাধীনতা হরণের খবর বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। স্বাধীনতা হারানোর সময় সিকিম জাতিসঙ্ঘের সদস্য পদভুক্তিরও প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

১৯৭১ সালেই সিকিম দখলের সিদ্ধান্ত ছিল ভারতের
চমকপ্রদ একটি বিষয় হলো সিকিম সেনাবাহিনীকে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় সাংবাদিক সুধীর শর্মা ‘পেইন অব লুজিং এ নেশন’ (একটি জাতির হারিয়ে যাওয়ার বেদনা) নামে একটি প্রতিবেদনে জানান, ভারত ব্রিটিশদের কাছ থেকে তার স্বাধীনতা লাভের গোড়া থেকেই সিকিম দখলের পরিকল্পনা করেছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু অনেকের সাথে কথোপকথনে তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সাবেক পরিচালক অশোক রায়না তার বই ‘ইনসাইড স্টোরি অব ইন্ডিয়াস সিক্রেট সার্ভিস’-এ সিকিম সম্পর্কে লিখেন, ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৯৭১ সালেই সিকিম দখল করবে। সে লক্ষ্যে সিকিমে প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন, হত্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়। তারা ছোট ছোট ইস্যুকে বড় করার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। তার মধ্যে হিন্দু-নেপালি ইস্যু অন্যতম। সাংবাদিক সুধীর শর্মা লিখেন, লেন্দুপ দর্জি নিজেই শর্মাকে বলেছেন, ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর লোকেরা বছরে দু-তিনবার তার সাথে দেখা করে পরামর্শ দিতেন কিভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা যাবে। তাদের এক এজেন্ট তেজপাল সেন এ আন্দোলন পরিচালনার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাকে অর্থ দিয়ে যেতেন। এ অর্থ দিয়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাস পরিচালিত হতো। শর্মা আরো লিখেছেন, এই ‘সিকিম মিশনের’ প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ‘র’।

দ্বৈত খেলা খেলেছে ভারত
ভারত সিকিমের ক্ষেত্রে দ্বৈত খেলা খেলেছে। চূড়ান্ত মুহূর্ত আসার আগে পর্যন্ত চগিয়াল লামডেনকে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা বুঝতে দেয়নি। তারা তাকে বলেছে, সিকিমে রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হবে। চগিয়ালকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনারারি মেজর জেনারেল পদবিও প্রদান করা হয়েছিল। অপর দিকে লেন্দুপ দর্জিকে বলেছে, যেকোনো মূল্যে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করতে হবে।

চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের পরামর্শে কান দেননি চগিয়াল
ভারত অন্তর্ভুক্তির সময় সিকিমে কর্মরত তৎকালীন ভারতীয় দূত (পলিটিক্যাল অফিসার) বি এস দাস তার গ্রন্থ ‘ঞযব ঝরশশরস ঝধমধ’-এ লিখেছেন, ভারতের জাতীয় স্বার্থেই সিকিমের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন ছিল। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করেছি। চগিয়াল যদি বিচক্ষণ হতেন এবং তার কার্ডগুলো ভালোভাবে খেলতে পারতেন, তাহলে ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তা না হয়ে ভিন্ন কিছু হতে পারত।
চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের পরামর্শে কান দেননি সিকিমের চগিয়াল। তিনি ভারতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে করম চাঁদ গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর প্রতি ছিলেন খুবই শ্রদ্ধাশীল। ১৯৭৪ সালে সিকিমের তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই চগিয়াল কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন নেপালের রাজা বীরেন্দ্রর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজা বীরেন্দ্র, সফররত চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী চেন লাই ইয়ান এবং পাকিস্তানি দূত চগিয়ালকে সিকিমে না ফিরতে পরামর্শ দেন। ক্যাপ্টেন সোনাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এই তিন দেশের নেতৃবৃন্দ সিকিমকে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে একটি মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপন করেন। কিন্তু চগিয়াল লামদেন তাতে সম্মতি দেননি। এর কারণ তিনি নাকি স্বপ্নেও ভাবেননি, ভারত সিকিম দখল করে নিতে পারে।

চীন সীমান্তে ৩ স্বাধীন রাষ্ট্র নয়াদিল্লির জন্য অস্বস্তিকর ছিল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক বোমার সফল বিস্ফোরণ ইন্দিরা গান্ধীর আত্মবিশ্বাস বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়। কংগ্রেস নেত্রী নয়াদিল্লিতে তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেন। নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন ছিল সিকিমের স্বাধীন সত্তার বিকাশ নিয়ে। ভুটানের পথ ধরে সিকিম যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ লাভ করে ফেলত, তাহলে তা হতো নয়াদিল্লির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বড় রকম বাধা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীন সীমান্তে তিন হিমালয়ান স্বাধীন রাজ্য নেপাল, সিকিম ও ভুটান গায়ে গা লাগিয়ে অবস্থান করুক এটাও কৌশলগত কারণে দিল্লি নিরাপদ মনে করেনি।

লেন্দুপ দর্জির শেষ জীবন ছিল অভিশপ্তের
ভারতে যোগদানের পর লেন্দুপ দর্জি হন সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে আসীন ছিলেন। তবে স্বর্গসুখের যে খোয়াব তিনি দেখেছিলেন, সেটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। তার দলের প্রতি জনগণের আস্থা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে লেন্দুপ দর্জির এসএনসি একটি আসনও পায়নি। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে লেন্দুপ দর্জি দেখেন ভোটার তালিকায় তার নামটিও নেই। নেপথ্য শক্তি তার রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি টেনে দেয়।
সমকালীন ইতিহাসে সমালোচকদের কাছে লেন্দুপ দর্জি বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। তার সমর্থকেরাও পরবর্তী সময়ে তাকে ত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সালে কালিমপংয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবন লেন্দুপ দর্জি দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘সবাই আমার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলছে, আমি নাকি নিজের মাতৃভূমি সিকিমকে বিক্রি করে দিয়েছি। তা যদি সত্যও হয় সে জন্য কি আমি একাই দায়ী?’ কিন্তু এই অভিযোগ এতই গুরুতর ছিল যে, লেন্দুপ দর্জি আর কখনোই সিকিমে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে যেতে পারেননি। চাকুং হাউজে আমৃত্যু তাকে নিঃসঙ্গ দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। তার মৃত্যু সিকিমবাসীর মনেও কোনো সহানুভূতি বা বেদনার উদ্রেক করতে পারেনি।
লেন্দুপ দর্জি মনে করতেন, কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর দিল্লি তাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তার আক্ষেপভরা মন্তব্য, ‘সিকিমকে ভারতের হাতে তুলে দিতে হেন চেষ্টা নেই যা আমি করিনি। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নয়াদিল্লি আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।’ সাপ্তাহিক জন আস্থা পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে লেন্দুপ দর্জি বলেন, ‘আগে নয়াদিল্লিতে আমাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করা হতো। এখন ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেও আমাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়।

ভারতে অন্তর্ভুক্তি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত
ভারতের সিকিম দখলের বিরুদ্ধে চীন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সিকিমের রাজপথে কোনো গণপ্রতিরোধ দেখা যায়নি। তাই বেইজিংয়ের ভূমিকা সীমিত ছিল জাতিসঙ্ঘে প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্যেই। ১৯৭৭ সালে ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর টানা ১১ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৭৮ সালে প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই সিকিম সম্পর্কে মুখ খোলেন। তার মতে, সিকিমের ভারতে অন্তর্ভুক্তি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এমনকি সিকিমের যেসব রাজনৈতিক নেতা ভারতে যোগদানের পক্ষে কাজ করেছিলেন, তারাও বলেছেন, এটা ছিল ঐতিহাসিক ভুল। কিন্তু তত দিনে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে।

ভারতের রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি সিকিমের বড় অর্জন
ভারতের এ কাজকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সমর্থন না দিলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ভুলটা এ ব্যাপারেই করলেন তাজউদ্দিন আহমদ। ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করলেন সিকিম সম্পর্কে এবং অজুহাত এসে গেল শেখ মুজিবের হাতে।
সিকিম সম্পর্কে তাজউদ্দিন আহমদের বক্তব্যটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালের ১৪ অক্টোবর সোমবার দ্য অমৃতবাজার পত্রিকায়। বাংলাদেশের কোনো পত্রিকায় সংবাদটি আসেনি।
ইংরেজি দৈনিক দ্য অমৃতবাজার পত্রিকার সেই খবর : ‘‘বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মি. তাজউদ্দিন আহমদ গত রোববার ‘ভারত-বাংলা বন্ধুত্ব বিনাশে বৃহৎ শক্তিবর্গের পাকানো’ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার জন্য ভারতীয় জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে ঢাকা ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে স্বল্প বিরতিকালে মি. আহমদ রিপোর্টারদের বলেন যে, সিকিম ইস্যু নিয়ে টোকিও, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চলছে। এসব জায়গায় কিছু সংবাদপত্র মন্তব্য করেছে যে, নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
ব্যক্তিগতভাবে মি. আহমদ মনে করেন যে, ভারতের একটি সহযোগী রাজ্য হিসেবে সিকিমের স্বীকৃতি ‘সিকিম জনগণের একটি অর্জন’।” এই ঘটনার কিছুদিন পর অবশ্য তাজউদ্দিন আহমদকে পদত্যাগ করতে হয়।

ভারতের নেতৃবৃন্দ বরাবরই অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর
ভারতের নেতৃবৃন্দ বরাবরই অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর। আর সে লক্ষ্যে ভারত চায় এর প্রতিবেশী দেশগুলোকে নানাভাবে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে সেখানে লেন্দুপ দর্জির মতো তাঁবেদার সরকার বসিয়ে দেশটিকে ভারতের সাথে একীভূত করে নিতে। সিকিম তার বড় প্রমাণ। ভারতের প্রতিটি প্রতিবেশী দেশের মানুষকে এ অন্তর্নিহিত সত্যটি উপলব্ধিতে রেখে দেশ পরিচালনা করতে হবে। নইলে বিপর্যয় অবধারিত।

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ‘সিকিমফোবিয়া’
সিকিমের ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের প্রতিরক্ষা ভারত দিনের পর দিন জোরদার করায় এই আশঙ্কা আরো জোরালো হচ্ছে। এই কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশের সাথে যুক্ত সীমান্ত আউট পোস্টগুলোর (বিওপি) একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৪-৫ কিলোমিটারে নিয়ে আসা হচ্ছে। এগুলোতে বিএসএফের শক্তিও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
বিএসএফ এই সীমান্তে থারমাল নাইটভিশন ডিভাইস, টেলিস্কোপিক বন্দুকসহ উচ্চমানের হাতিয়ার মোতায়েন রেখেছে। সেই সাথে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার এলাকাকে কাঁটাতারের বেড়াসহ ফ্লাডলাইটের আওতায় আনার এবং প্রশিক্ষিত কুকুর মোতায়েন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকা ফ্লাডলাইটের আওতায় আনা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা কাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও ভারত মানছে না। বলাবাহুল্য, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ও সড়ক তৈরি প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যেই পড়ে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হলেও তা কোনো ফল দেয়নি। ভারতের বর্তমান প্রস্তুতি অনুযায়ী সীমান্ত সড়ক দিয়ে অনায়াসে সামরিক যান চলাচল করতে পারবে। এর ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও জোরদার করতে পারবে।
এ কারণেই বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে ‘সিকিমফোবিয়া’ কাজ করছে প্রবলভাবে। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অবিশ্বাসের অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশও সিকিমের পরিণতি বরণ করে কি না।

রয়টার্সের বিশ্লেষণ: যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ইসলামভীতি ছড়ানোর আশঙ্কা

           USA

ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম ভীতিতে ইন্ধন যোগানোর জন্য আমেরিকান মুসলিমরা রিপাবলিকান পার্টির জনপ্রিয় দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বেন কারসনের মন্তব্যে তীব্র ক্রোধ, ক্ষোভ ও হতাশা মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টির ইসলামী ইনস্টিটিউটে কয়েকজন মুসলিম মা ও তাদের শিশু সন্তানদের আক্রমণ করে গালি দেয়ার ঘটনায় সেখানে ইতোমধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চলতি বছর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার বার্ষিকীতে আমেরিকান নয়- এমন একদল মা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে ওই ইসলামী ইনস্টিটিউটে আসলে কয়েকজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ চিৎকার করে তাদের কাপুরুষ বলে আক্রমণ করেন। মূলত এরপর থেকেই সেখানে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।
ওই ইসলামী ইনস্টিটিউটটি অ্যানাহেইম শহরে একটি স্কুল ও একটি মসজিদ পরিচালনা করে থাকে। দেশটির ২৮ লাখ মুসলমানদের অধিকাংশই মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় চলমান এই উত্তেজনা আরো কুৎসিত আকার ধারণ করতে পারে। তারা ক্রোধ ও ধর্মান্ধতার শিকার হতে পারে বলেও ইতোমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ফিলিস্তিন-আমেরিকান জুহাইর শাথ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এমন কারো মুখে এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত হতাশাজনক।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সির জন্য মুসলমানরা উপযোগী নয় বলে গত রোববার মন্তব্য করেন অবসরপ্রাপ্ত নিউরোসার্জন কারসন।
প্রচারণা চালানোর সময় করা ওই মন্তব্যের সমর্থনে সোমবার কারসন বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে মুসলিমদের নিষিদ্ধ করা উচিত-এমন পরামর্শ তিনি দেননি। কিন্তু একজন মুসলিম দেশটির নেতা হোক তা তিনি চান না এবং এটা তিনি সমর্থনও করবে না। পরে কারসন আরো বলেন, তিনি তার নিজের মন্তব্যকে পুরোপুরিই সমর্থন করেন। এরপরেও যারা মৌলবাদী ইসলামপন্থাকে নিন্দা করেন- এমন একজন মধ্যপন্থী মুসলিম প্রার্থীর জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করা যেতে পারে।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান দলের একাধিক প্রার্থীর মধ্যে মতামত জরিপে কারসন শীর্ষস্থানে রয়েছেন।
কারসনের এই মন্তব্যের পর আরেক প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শুক্রবার রাতে নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রচারাভিযানকালে দলটির একজন সমর্থক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে একজন মুসলমান বলে আখ্যা দেন। কিন্তু ধনকুবের ট্রাম্প ওই মন্তব্যকে মৌন সমর্থন জানান। -রয়টার্স

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় মসজিদ উদ্বোধন করবেন পুতিন (ভিডিওসহ)

Mosjid

লাখো হাজি যখন পবিত্র হজ পালনের জন্য আরাফার ময়দানে, তখন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় উদ্বোধন করা হচ্ছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় মসজিদ। আর মসজিদটি উদ্বোধন করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিন।

যে রাশিয়ায় এক সময় ধর্ম-কর্ম নিষিদ্ধ ছিল সেখানে কি-না স্বয়ং প্রেসিডেন্ট উদ্বোধন করছেন কেন্দ্রীয় মসজিদ। বিষয়টি অবাক করার মতো। তবে রুশ মুসলমানদের জন্য দিনটি খুবই আনন্দের। নতুন মসজিদের উদ্বোধন রাশিয়ার মুসলমানদের সুন্দর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করছে। রাশিয়া মুসলমানদের সঙ্গে মসজিদটি উদ্বোধনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখটিকেই নির্ধারণ করা হয়েছে। উদ্বোধনের পরদিনই এ মসজিদের অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদুল আজহার জামাত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো থাকবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগান, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, কাজাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নুর সুলতান নাজারবয়েভ, রাশিয়ায় নিযুক্ত বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূত, বিশ্বের খ্যাতিমান ইসলামি স্কলার ও রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা। মস্কোর এই কেন্দ্রীয় মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন ১০ হাজার মুসল্লি। মসজিদটি মস্কোর ক্যাথেড্রল মস্ক ও জুমা মসজিদ নামেও পরিচিত।

চার বছর আগে এটি ভেঙে ১০ হাজার নামাজির স্থান সংকুলানের উপযোগী করে, নতুন করে নির্মাণ করা হয়। এটি আগের চেয়ে ২০ গুণ বড় করে নির্মাণ করা হয়েছে। এর বর্তমান আয়তন ১৯ হাজার বর্গমিটার।

তুরস্কের ধর্মবিষয়ক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টার্কিশ ডেয়ানেট মসজিদটির অভ্যন্তরীণ ডিজাইনের ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়েছে।

মস্কোতে মসজিদ রয়েছে মাত্র ৬টি। মুসলমানরা আরও নতুন মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা করছেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়ায় প্রায় ১৩ মিলিয়ন মুসলিম অধিবাসী রয়েছে। এর মধ্যে ১.৫ মিলিয়ন মুসলমান মস্কোয় বসবাস করে। তবে বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাশিয়ায় প্রায় ২০ মিলিয়ন মুসলিম অধিবাসী রয়েছে।

ভিডিও দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন: Vladimir Putin built Largest Mosque in Europe

বিশ্বের শীর্ষ অপরাধীর তালিকায় মোদী!

Modi

জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলে গিয়ে কখনও দুনিয়ার শীর্ষ ১০ কুখ্যাত দুষ্কৃতীর খোঁজ করেছেন? হয়তো আপনার প্রয়োজন পড়েনি কখনও। কিন্তু, নেহাত কৌতূহল বশে যদি কখনও ‘Top 10 criminals in the world’ লিখে সার্চ মারেন, ধাক্কা একটা খাবেন-ই খাবেন, এটা জোর দিয়েই বলা যায়।

কারণ, দুনিয়ার ওই শীর্ষ দুষ্কৃতী তালিকায় আপনি যাঁর ছবি দেখবেন, তিনি ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! দুনিয়ার শীর্ষ দুষ্কৃতীদের তালিকায় দু-নম্বরেই আছে নরেন্দ্র মোদীর ছবি। শুধু তাই নয়, দুষ্কৃতীর প্রথম বারোয় তিন বার আসছে মোদীর ছবি।
গুগলের এই ‘ভুল’ প্রকাশ্যে আসতেই রে-রে করে উঠেছেন মোদী অনুরাগীরা। টুইটারে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। দাবি উঠেছে, দ্রুত ওই ছবি সরিয়ে ফেলতে হবে। সেইসঙ্গে অনভিপ্রেত এই ঘটনার জন্যে গুগলের তরফে ক্ষমা চাইতে হবে নরেন্দ্র মোদী ও দেশবাসীর কাছ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার আবেদন কিভাবে করতে হয়?

Usa-Visa

বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আমেরিকা যাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া শিথিল করা হয়েছে। তথ্য সুবিধার জন্য কল সেন্টারে ফোন করে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় সহায়তাও নিতে পারবেন বাংলাদেশী নাগরিকরা।  কল সেন্টার রবি হতে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন সকাল ৮টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত এটি চালু থাকবে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এই নতুন পদ্ধতিতে বর্তমানে  ১৪ সেপ্টেম্বর হতে চালু হয়েছে । http://dhaka.usembassy.gov ওয়েব ঠিকানায় লগ-ইন করে ভিসা আবেদনকারীরা ভিসার জন্য সহজেই আবেদন করতে পারবেন। নতুন ওয়েবসাইট ও কলসেন্টার হতে বাংলা এবং ইংরেজিতে তথ্য দেওয়া হবে। যে কারণে ভিসার আবেদন সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য পাওয়া আরও সহজতর হবে। পূর্বে অনলাইনে আবেদনের পর আবেদনকারীদের সাইমন সেন্টারে সশরীরে গিয়ে সাক্ষাৎকারের সময়সূচি জানা লাগতো। নতুন নিয়মে আবেদনকারীরা ওয়েবসাইট হতেই ব্যক্তিগত কিংবা দলগতভাবে সাক্ষাৎকারের সময়সূচির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবার আবেদনের নির্দেশনা জানতে পারবেন ও এ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যও পাবেন।

নতুন পদ্ধতিতে আবেদনকারীরা সাক্ষাৎকারের সময়সূচি যদি পান তাহলে এইচএসবিসি ব্যাংকের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম শাখায় ভিসা ফি জমা দিতে পারবেন ও এক বছর মেয়াদি টাকা জমার রসিদ পাবেন। গত ৩১ আগস্ট হতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ভিসা ফি জমা নেওয়া হচ্ছে না বলে জানানো হয়। তবে যারা এক বছরের কম সময়ের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন, তবে তারা সেই টাকা জমার রসিদ ব্যবহার করেও ভিসার আবেদন করতে পারবেন। তবে ৩১ আগস্টের পর হতে শুধু এইচএসবিসি ব্যাংকেই ভিসা ফি জমা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বর্তমানে  এই লিংকে ক্লিক করে ফরম পূরণ করতে পারবেন: http://www.ustraveldocs.com