কাঠ দিয়ে তৈরি হয় দৃষ্টিনন্দন শোপিস। দেশ-বিদেশে এসব শোপিসের রয়েছে দারুণ চাহিদা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন শেখ ফায়সাল ও সানজিদ আসাদ
কাঠের শোপিস বানাতে হাতে যশ থাকা চাই। অভিজ্ঞ কারো সঙ্গে কাজ করেও শিখতে পারেন। সম্ভব না হলে কারিগর রেখেও শোপিস তৈরি করতে পারেন। নাটোরের সিংড়ার ফরিদুল ইসলামের তৈরি কাঠের হস্তশিল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে ছয়টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রথমে অন্যের প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও এখন তাঁর প্রতিষ্ঠানেই কাজ করছেন পাঁচ-ছয়জন কর্মচারী। ফরিদুল জানান, কাঠ দিয়ে তিনি তৈরি করেন তাজমহল, টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানি, কলমদানি, নৌকা, মাছ, পাখি, হাতি, জুয়েলারি বক্স, টেবিলঘড়ি, দেয়ালঘড়ি, গাড়ি, পাউডার কেস, মোমদানিসহ হরেক রকম শোপিস। খুব বেশি বিনিয়োগের দরকার হয় না। অব্যবহৃত একটি ঘর কারখানা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
উপকরণ
ঢাকার মানিকনগরের শোপিস কারিগর আবদুল্লাহ মমিন জানান, কাঠ, ফেলনা কাঠের টুকরা এবং গুল্ম দিয়ে তৈরি করা যায় বিভিন্ন ধরনের শোপিস। নিখুঁতভাবে কাঠ খোদাই করে তৈরি করা হয় এসব বাহারি পণ্য। তাতে প্রয়োজন অনুসারে রং করা হয়। শোপিস আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বার্নিশ করা হয়। বার্নিশে অনেকে এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করেন। জোড়া দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেন ভালো মানের আইকা।
সতর্কতা
আবদুল্লাহ মমিন জানান, শোপিস যত নিখুঁত হবে, দামও হবে তত বেশি। তাই তৈরির সময় সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষ করে কাঠ খোদাই করার সময়। এ ছাড়া একটু অসাবধানতায় ভেঙে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে পণ্যটি।
শোপিসের বাজার
আবদুল্লাহ মমিন জানান, ঢাকার বিভিন্ন সুপার মল, উপহার সামগ্রীর দোকান, হস্তশিল্পের দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দামে বিক্রি করা হয় শোপিস। এ ছাড়া কারখানা থেকেই হকাররা পাইকারি দামে কিনে নিয়ে শহর ও গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে এসব পণ্য বিক্রি করেন।
বিদেশেও এসব শোপিসের দারুণ চাহিদা আছে। ফরিদুল জানান, তাঁর তৈরি শোপিস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইতালি, জার্মানি, আরব আমিরাত, মরিশাস, দুবাই, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।
ঢাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের বিসমিল্লাহ কটেজের কর্ণধার হেলাল খান জানান, চাহিদা অনুযায়ী শোপিসের সরবরাহ কম। সব ধরনের ক্রেতাই ঘর সাজাতে বা উপহার দিতে কাঠের শোপিস কিনে নিয়ে যান। তবে ছাত্রছাত্রী ও গৃহিণীরা এসব পণ্য বেশি কিনে থাকেন।
আয়ের হিসাব
ফরিদুল ইসলাম জানান, কারিগরদের দৈনিক হিসাবে মজুরি দিতে হয়। প্রতি পিস পণ্য বিক্রি হয় প্রকারভেদে ২০ থেকে ৫০০ টাকায়। আবদুল্লাহ মমিন শুরু করেছিলেন মাত্র ২৫ হাজার টাকায়। এই টাকা দিয়ে তিনি কিছু পরিত্যক্ত কাঠ, শোপিস তৈরির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বার্নিশ ও কেমিক্যাল কিনেছিলেন। শুরুতে মাসে আয় হতো ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। এখন ব্যবসা বড় হয়েছে, লোকবলও অনেক। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ১২ জন কর্মচারী। সব খরচ বাদে মাসে আয় থাকে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।